ফিনল্যান্ড: হ্রদ ও বনের দেশ
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত ফিনল্যান্ড একটি রাষ্ট্র যা সৌন্দর্য ও আধুনিকতার অপূর্ব মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ। হাজার হাজার হ্রদ ও ঘন সবুজ বনানী দেশটিকে করে তুলেছে রূপকথার জাদুকরী দেশ। এর এক-তৃতীয়াংশ এলাকা আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে অবস্থিত। ফিনীয় ভাষায় দেশটির নাম সুওমি (Suomi), যার অর্থ হল 'হ্রদ ও জলাভূমির দেশ'। ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হল হেলসিঙ্কি।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রায় ৭০০ বছর সুইডেনের অধীনে থাকার পর ১৮০৯ সালে ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অধীনে চলে যায়। ১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লবের পর ফিনল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফিনল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত হয়। ১৯৪৮ সালে ফিনল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ফিনল্যান্ড ইউরোপের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং ১৯৯৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
ফিনল্যান্ড উত্তরে নরওয়ে, পূর্বে রাশিয়া, দক্ষিণে ফিনল্যান্ড উপসাগর এবং পশ্চিমে বথনিয়া উপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে হাজার হাজার ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। বর্তমানে ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ লক্ষ। দেশটির জনসংখ্যার ঘনত্ব ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
ফিনল্যান্ড একটি উন্নত অর্থনীতি সম্পন্ন দেশ। এর অর্থনীতি প্রযুক্তি, বনজ সম্পদ এবং পরিষেবা খাতের উপর নির্ভরশীল। ফিনল্যান্ড বিশ্বে শিক্ষার মানের জন্য বিখ্যাত। ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। উচ্চশিক্ষাও বেশ সহজলভ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে টিউশন ফ্রি।
সংস্কৃতি:
ফিনল্যান্ডের সংস্কৃতি অনন্য ও সমৃদ্ধ। সাউনা (বাষ্পস্নান) ফিনল্যান্ডের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফিনল্যান্ডের আধুনিক স্থাপত্য ও ডিজাইন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
মধ্যরাতের সূর্য:
গ্রীষ্মের মাসগুলিতে ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে মধ্যরাতের সূর্যের দৃশ্য দেখা যায়। এই সময়টি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সময়।