ফয়েজুর রহমান আহমেদ (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ - ৫ মে, ১৯৭১): বাংলাদেশের একজন অসামান্য পুলিশ কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ফয়েজুর রহমান আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদের জনক ছিলেন। ১৯২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশের) নেত্রকোনার কুতুবপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। গ্রামে স্কুল না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তাঁকে অন্যত্র যেতে হয়। ১৯৪৩ সালে তিনি কলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৪৮ সালে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে সিলেট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা এবং পিরোজপুরে কর্মরত ছিলেন। বগুড়ায় কর্মরত অবস্থায় ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান এবং পরে কুমিল্লায় ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পিরোজপুরে সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন লেখকও ছিলেন।
৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪ সালে আয়েশা ফয়েজের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁদের প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ (কাঁজাল), ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আরও ছিলেন এক কন্যা সুফিয়া হায়দার শেফালী, এক পুত্র মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, দ্বিতীয় কন্যা মমতাজ শহীদ শিখু এবং শেষ পুত্র আহসান হাবিব। শেষ কন্যা রুখসানা আহমেদ বান্দরবানে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের পর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অত্যাচারের শিকার হন ফয়েজুর রহমান। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। ২৭শে মার্চ জিয়াউর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা শুনে তিনি পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে প্রায় ২০০টি রাইফেল সাধারণ জনগণের কাছে বিতরণ করেন। ৫ই মে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিরোজপুরে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরে তাকে একটি মিটিংয়ের নামে ডেকে বালেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।