প্রফেসর হামিদুজ্জামান

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৫৩ পিএম

প্রফেসর হামিদুজ্জামান: একজন অসাধারণ শিল্পী ও ভাস্কর

প্রফেসর হামিদুজ্জামান খান বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর। তিনি তার ফর্ম, বিষয়বস্তু এবং নিরীক্ষামূলক ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত। ১৯৪৬ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন হয়। তারপর তিনি ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এখানে তিনি জয়নুল আবেদীন, সফিউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম এবং মুস্তফা মনোয়ারের মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের সান্নিধ্যে ছিলেন।

১৯৬০ এর দশকে জয়নুল আবেদীন হামিদুজ্জামানের জলরঙের কাজের প্রশংসা করে উৎসাহিত করেন। ১৯৬৭ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর তিনি যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা করেন এবং সেখানে আধুনিক ভাস্কর্যের সাথে পরিচিত হন। পরে তিনি ভারতে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি পান এবং ১৯৭৬ সালে বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন (১৯৭০-২০১২)।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত ‘একাত্তর স্মরণে’ শীর্ষক ভাস্কর্যের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। তার ভাস্কর্যে এক্সপ্রেশনিজম এবং মিনিমালিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তিনি আধা-বিমূর্ত এবং বিমূর্ত উভয় ধারাতেই কাজ করেছেন। ভাস্কর্য ছাড়াও, তার জলরঙ ও অ্যাক্রিলিক চিত্রকর্মও সমাদৃত। ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।

তার শিল্পকর্ম বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, বুলগেরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত হয়েছে। হামিদুজ্জামানের শিল্পকর্মে মুক্তিযুদ্ধ, পাখি, মানব শরীর এবং প্রকৃতির উপাদান প্রধান বিষয়বস্তু। তিনি ব্রোঞ্জ, ইস্পাত, পাথর, অ্যালুমিনিয়াম, মার্বেল এবং মিশ্র মাধ্যমে কাজ করেছেন। তার ৩৩টির বেশি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ১৫০ টির বেশি ভাস্কর্য বিভিন্ন দেশে স্থাপিত হয়েছে। তার বঙ্গভবনের ফোয়ারায় স্থাপিত ‘পাখি পরিবার’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’, এবং গাজীপুরের ‘জাগ্রতবাংলা’ উল্লেখযোগ্য।

২০১৮ সালে গাজীপুরে ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে তার ২০ টির বেশি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। তার ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে অনেক তথ্য স্পষ্ট নয়, তবে তিনি ১৯৭৬ সালে আইভি জামানকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই পুত্র রয়েছে। তার শিল্পকর্মের সম্পূর্ণ তালিকা এবং তার জীবনের আরও বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্ত হলে আমরা আপনাদের সাথে পরবর্তীতে আপডেট করে জানাব।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর
  • ১৯৪৬ সালে কিশোরগঞ্জে জন্ম
  • ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক ও বারোদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
  • ১৯৭৬ সালে একাত্তর স্মরণে ভাস্কর্যের জন্য খ্যাতি অর্জন
  • ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিক্ষকতা (১৯৭০-২০১২)
  • মুক্তিযুদ্ধ, পাখি, মানব শরীর ও প্রকৃতি তার শিল্পকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - প্রফেসর হামিদুজ্জামান

প্রফেসর হামিদুজ্জামান আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন।