প্রণোদনা

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:০৫ পিএম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারি প্রণোদনা:

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন ধরণের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ই এপ্রিল ২০২০ সালে প্রথমে ৭২,৭৫০ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আরও প্রণোদনা প্যাকেজ যোগ হওয়ার ফলে মোট প্রণোদনার পরিমাণ ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এই প্রণোদনা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ যোগানো, এবং কর্মসংস্থান রক্ষা করা। প্রণোদনা বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল, যেমন:

  • শিল্প ঋণ: ৩০,০০০ কোটি টাকা (৯% সুদে, সরকার ৪.৫% সুদ ভর্তুকি দেয়)
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME): ২০,০০০ কোটি টাকা (৯% সুদে, সরকার ৫% সুদ ভর্তুকি দেয়)
  • রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন: ৫,০০০ কোটি টাকা
  • নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষক: ৫,০০০ কোটি টাকা
  • রফতানি উন্নয়ন তহবিল: ১২,৫০০ কোটি টাকা
  • প্রিশিপমেন্ট ঋণ: ৫,০০০ কোটি টাকা
  • গরিব মানুষের নগদ সহায়তা: ৭৬১ কোটি টাকা
  • স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ: ৪০০ কোটি টাকা

প্রণোদনা বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল। বেশিরভাগ প্রণোদনা ঋণের আকারে ছিল, যেখানে সরকার সুদের একটি অংশ ভর্তুকি দিত। তবে, নগদ সহায়তা সরাসরি প্রাপকদের হিসাবে স্থানান্তরিত হত।

বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ:

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD) এর মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক এই প্রণোদনার সুফল পায়নি। ব্যাংকিং ব্যবস্থার জটিলতা, প্রণোদনা আবেদন প্রক্রিয়া, এবং স্বচ্ছতার অভাব ছিল এর কিছু কারণ। CPD এর এক গবেষণায় দেখা গেছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাত্র ১৫% তাদের পূর্ণাঙ্গ এপ্রিল মাসের বেতন পেয়েছে। আর নগদ সহায়তার ক্ষেত্রেও ৫০ লাখ পরিবারের তালিকায় অনিয়ম ও ত্রুটি দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত:

অর্থনীতিবিদরা প্রণোদনার সামগ্রিক ইতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করলেও, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতার উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যাতে সহজে প্রণোদনার সুফল পায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার:

করোনাভাইরাস মহামারী দেশের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলে। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ এই ক্ষতি মোকাবেলায় একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলেও, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকায় সুফল সকলের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। ভবিষ্যতে এই ধরণের ক্রাইসিস মোকাবেলায় আরও সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ প্রণোদনা ব্যবস্থার প্রয়োজন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশ সরকার ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ ৩ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
  • প্রণোদনার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ যোগানো, এবং কর্মসংস্থান রক্ষা করা।
  • প্রণোদনা বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল, যেমন শিল্প ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রফতানিমুখী শিল্প, নিম্ন আয়ের মানুষ, এবং স্বাস্থ্যখাত।
  • প্রণোদনা বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক এই প্রণোদনার সুফল পায়নি।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।