বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজ: একটি বিস্তারিত আলোচনা
বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত পুলিশ স্টাফ কলেজ (PSC) বাংলাদেশের পুলিশিং ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০০০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর সেক্টরে কার্যক্রম শুরু করে কলেজটি। পুলিশ স্টাফ কলেজ আইন, ২০০২ অনুসারে কলেজটি আইনসম্মত সংস্থা হিসেবে কার্যকর হয়।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে পুলিশ কমিশন (১৯৭৭) সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্য একটি স্টাফ কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করে। ১৯৮৮-৮৯ সালের আরেকটি পুলিশ কমিশন রিপোর্টে এই প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হয় এবং ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে সরকার এর অনুমোদন দেয়।
অবস্থান ও পরিকাঠামো:
ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর সেক্টরে ১৯ একর জমির উপর অবস্থিত পুলিশ স্টাফ কলেজের অত্যাধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে। এখানে আছে প্রশিক্ষণ কক্ষ, লাইব্রেরী, গবেষণা কেন্দ্র, আবাসিক সুবিধা এবং আরও অনেক।
কলেজের কার্যক্রম:
কলেজটির প্রধান কাজ হলো সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিক পুলিশিংয়ের নীতিমালা ও কৌশল সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং পুলিশিং সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা। কলেজে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত হয়, যেমন মাস্টার্স অব অ্যাপ্লাইড ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ ম্যানেজমেন্ট (MACPM) এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট (PGDSM)। কলেজের লাইব্রেরিতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বই, জার্নাল, সাময়িকী এবং গবেষণা প্রতিবেদন রয়েছে।
পরিচালনা:
একজন অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল পদের কর্মকর্তা কলেজের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি গভর্নর বোর্ড কলেজের পরিচালনা তত্ত্বাবধান করে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে MACPM প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
- ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে PGDSM প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
- আন্তর্জাতিক পুলিশ গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র (IPRIC) এর উদ্বোধন।
- পুলিশ স্টাফ কলেজ ক্রিকেট দলের আইজিপি কাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়।
উপসংহার:
পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও শিক্ষা ব্যবহার করে তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পুলিশিংয়ের উন্নতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে এই কলেজ আরও উন্নত ও আধুনিক হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।