পুতুল

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:৩৩ এএম
নামান্তরে:
Doll
Doll making
Doll Hospital
পুতুল

বাংলাদেশের পুতুল শিল্প: ঐতিহ্যের ধারক ও বহুমুখী রূপ

পুতুল, শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা রকমের ছোট ছোট মানুষের মূর্তি। কিন্তু পুতুল কেবলমাত্র শিশুদের খেলনা নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ নানা ধরণের উপকরণ ব্যবহার করে পুতুল তৈরি করে আসছে। মাটি, কাঠ, কাপড়, শোলা, পাট, ধাতু - এই সকল উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি পুতুলের নানা রকমের আকার, রঙ ও ডিজাইন আছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়, মহেঞ্জোদারোসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য স্থানেও পুতুল তৈরি হত। বাংলাদেশের সাভার, ময়নামতী, মহাস্থানগড় ও দিনাজপুরের প্রত্নস্থলে স্থাপত্যকর্মে পুতুলের বিভিন্ন কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। এগুলোর মধ্যে দেব-দেবীর মূর্তি, সিংহ, মহিষ, বাঘ, হরিণ, শেয়াল, হাতি, ভল্লুক, বানর, মাছ এবং হাঁস উল্লেখযোগ্য। এই প্রমাণগুলি স্পষ্ট করে যে পুতুল শিল্পের ঐতিহ্য কতটা প্রাচীন।

পুতুল তৈরির প্রধান উপকরণ মাটি। বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে, বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাটির পুতুল তৈরি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া ঢাকার সাভার, ধামরাই এবং রায়েরবাজারেও বিভিন্ন ধরণের পুতুল তৈরি হয়। কুমাররা হাতে বা ছাঁচে পুতুল তৈরি করে। হাতে তৈরি পুতুলে কারিগরের নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা প্রয়োগ করা হয়। এগুলো রোদে শুকিয়ে অল্প আগুনে পোড়ানো হয়, কোনো রঙ ব্যবহার করা হয় না।

কাঠের পুতুল তৈরিতে কদম, আমড়া, জিওল, শ্যাওড়া, ছাতিম, শিমুল প্রভৃতি কাঠ ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে ‘মমি পুতুল’ও বলা হয়, কারণ কাঠের তৈরি ত্রিকোণাকৃতি মেয়ে পুতুল মিশরের মমির মতো দেখতে। সোনারগাঁওয়ের শাহ্পুর গ্রাম এই ধরণের পুতুল তৈরির জন্য বিখ্যাত। চার চাকাওয়ালা কাঠের ঘোড়া এবং হাতি পুতুলও বেশ জনপ্রিয়।

শোলা, কাপড়, পাট এবং চীনামাটি দিয়েও পুতুল তৈরি করা হয়। ঢাকার শাঁখারি বাজারে শোলার পুতুল বেশি তৈরি হয়। কাপড়ের পুতুল শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং গৃহসজ্জার কাজেও ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পাটের তৈরি পুতুল গৃহসজ্জার নিদর্শন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ধাতু দিয়েও বিভিন্ন ধরণের পুতুল ও দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি হয়। ঢাকার লালবাগ, ধামরাই ও সাভারে এই ধরণের পুতুল বেশি তৈরি হয়। একসময় এগুলির প্রধান কারিগররা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, বর্তমানে অনেক মুসলমান কারিগরও এধরণের ধাতব পুতুল তৈরি করছে।

নাচের পুতুল মাটি ও কাঠের তৈরি। এসব পুতুলের ওপরের অর্ধাংশে রঙের সাহায্যে চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় এবং নিচের অংশে কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কান্দিপাড়া গ্রাম একসময় নাচের পুতুল তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল।

বর্তমানে মাটি ও কাঠের পুতুলের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমাররা বিভিন্ন আঙ্গিকে পুতুল তৈরি করছে। বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের পুতুল শিল্পের ঐতিহ্য প্রাচীন
  • মাটি, কাঠ, কাপড়, শোলা, পাট, ধাতু - বিভিন্ন উপকরণে পুতুল তৈরি
  • গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে পুতুল তৈরির কেন্দ্রসমূহ
  • হাতে ও ছাঁচে পুতুল তৈরির পদ্ধতি
  • ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক পুতুলের বৈচিত্র্য
  • দেশে ও বিদেশে পুতুলের বাজার চাহিদা

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - পুতুল

৮ জানুয়ারী ২০২৫

‘পুতুল’ নামক বাংলা চলচ্চিত্র অস্কারের ‘সেরা ছবি’ বিভাগে স্থান পেয়েছে।