পুঞ্চ, ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত জটিল। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে পুঞ্চ দুই ভাগে বিভক্ত হয়; একটি ভারতের অধীনে এবং অন্যটি পাকিস্তানের অধীনে। ভারতের পুঞ্চ জেলা জম্মু বিভাগের অন্তর্গত এবং তিনদিকে (উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ) নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control - LoC) দ্বারা পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের সাথে সীমানা বন্ধ।
ঐতিহাসিকভাবে, ১৮ শতকের শেষের দিকে লোরানের মুসলিম রাজাদের শাসনামলে পুঞ্চ গঠিত হয়। পরে এটি রাজা ফয়েজতলাব এবং পাঞ্জাব সরকারের অধীনে ছিল। ১৮৪৮ সালে, জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা গুলব সিং পাহাড়ি অঞ্চলের হস্তান্তরের জন্য পুঞ্চকে অন্তর্ভুক্ত করেন। পূর্বে, পুঞ্চকে লাহোরের জেলা হিসাবে বিবেচনা করা হত।
ভৌগোলিকভাবে, পুঞ্চ জেলা পর্বতময় অঞ্চলে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১৬৭৪ বর্গকিলোমিটার। পূর্বে কুলগাম, শোপিয়ান ও বুডগাম জেলা; দক্ষিণে রাজৌরি জেলা; এবং উত্তরে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের সীমান্ত রয়েছে। পুঞ্চ নদী জেলাটি অতিক্রম করে।
জনসংখ্যার দিক থেকে, ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে পুঞ্চের জনসংখ্যা ছিল ২৩,৪৪২। ২০১১ সালের জনগণনায় জেলার জনসংখ্যা ছিল ৪৭৬,৮৩৫। জনসংখ্যার বেশিরভাগ মুসলিম (প্রায় ৯০%), হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টানরাও বাস করেন। গুজ্জার, বাকেরওয়াল, জাট, মোগল, সৈয়দ, পাঞ্জাবি জাট, পাহারি, কাশ্মীরি এবং মুসলিম রাজপুত প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখানে বসবাস করে।
অর্থনীতিতে, কৃষিকাজ ও পশুপালন জেলার প্রধান পেশা। পুঞ্চ বিমানবন্দর (একটি হেলিকপ্টার বিমানবন্দর) ও সড়কপথ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গঠন করে। পুঞ্চে পারনাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন।
পুঞ্চ, ১৯৪৭-৪৮ এর যুদ্ধ, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য পরিচিত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেল রেজিমেন্টের সৈন্য নিয়োগ এখানে করা হয়। ১৯৪৭ সালে মার্কিন নির্মিত ডগলাস সি-৪৭ স্কাইট্রেন বিমান এখানে অবতরণের মাধ্যমে একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেছিল।
সাম্প্রতিককালে, পুঞ্চ নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি সেনাবাহিনীর গাড়ির দুর্ঘটনা, এবং স্থানীয়দের জড়িত থাকার অভিযোগের মত ঘটনা জেলার রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কথা বলে।