লাহোর প্রস্তাব: পাকিস্তানের জন্মলগ্নে একটি ঐতিহাসিক দলিল
১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ, লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে গৃহীত ‘লাহোর প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবটি আবুল কাশেম ফজলুল হক উপস্থাপন করেন। চৌধুরী খালিকুজ্জামান ও অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ এটি সমর্থন করেন।
প্রস্তাবের মূল বিষয় ছিল ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চল, যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেসব অঞ্চলে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি। প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর, ‘পাকিস্তান’ নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যদিও ১৯৪০ সালের প্রস্তাবে এই নামের উল্লেখ ছিল না। হিন্দু সংবাদপত্রগুলো প্রস্তাবটিকে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ হিসেবে উপস্থাপন করে, যা এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পেছনে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় এবং কংগ্রেসের শাসনের সময় মুসলিমদের প্রতি alleged অবিচার। জিন্নাহ তার বক্তৃতায় কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের সমালোচনা করেন এবং দ্বি-জাতি তত্ত্বের উপর জোর দেন। লাহোর প্রস্তাব মুসলমানদের রাজনৈতিক পরিচয় ও অধিকার সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায় এবং পাকিস্তান আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি করে। ১৯৪১ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এটি মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা পর্যন্ত এর প্রভাব বিদ্যমান ছিল। তবে, প্রস্তাবে ব্যবহৃত ‘Independent States’ শব্দটির ব্যাখ্যায় কিছু মতবিরোধ রয়েছে। কিছু মনে করেন এটি দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে বুঝায়, আবার কিছু মনে করেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকেই বুঝায়। তবে বেশিরভাগ মুসলিম লীগ নেতৃত্বের মতে এটি ছিল দুটি রাষ্ট্রের (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ) জন্য।
লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা পাকিস্তানের উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিয়েছিল।