পাকনা হাওর: সুনামগঞ্জের জীবন-নাড়ী ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনা হাওর অঞ্চলটি বোরো ধানের জন্য বিখ্যাত। এটি কৃষকদের জীবিকার প্রধান উৎস এবং জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৪,৪৪৮ হেক্টর বিস্তৃত এই হাওরে প্রায় ১১,৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়, যা থেকে প্রায় ৬৫,৫০০ টন ধান উৎপাদিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য: পাকনা হাওর ফেনারবাঁক ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি বহু ছোট ছোট নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা আর বিস্তীর্ণ সীমাহীন বিল মিলিয়ে গঠিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ অঞ্চলে বর্ষায় পানিরাশির ব্যাপ্তি অসাধারণ।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এই হাওরের কৃষিকাজ স্থানীয় কৃষকদের জীবিকার মূল ভিত্তি। বছরে একটিমাত্র বোরো ফসল তাদের পুষ্টি, আয় এবং আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যালেঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে পাকনা হাওর জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছে। পানি নিষ্কাশনের রাস্তা প্রতি বছর পলি মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে বোরো ধানের চাষে ১০-১৫ দিন বিলম্ব হচ্ছে। গজারিয়া স্লুইসগেট ও ঢালিয়া স্লুইসগেটের পলি মাটি সরানোর দাবি জানিয়ে আসছেন কৃষকরা। এছাড়া আগাম বন্যার আশঙ্কাও কৃষকদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
উন্নয়নমূলক উদ্যোগ: সরকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য পাউবোসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে কাজ করছে। পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি পলি মাটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৫৩টি হাওরে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ-বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার নির্মাণের কাজ চলছে।
কৃষকদের মতামত: স্থানীয় কৃষকরা সরকারের দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, পানি নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া উন্নত করা এবং আগাম বন্যা প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
পাকনা হাওরের ভবিষ্যৎ: পাকনা হাওরের স্থায়ী উন্নয়নের জন্য সমন্বিত একটি পরিকল্পনার প্রয়োজন। পানি নিরাপত্তা, বন্যা প্রতিরোধ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই হাওরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এর ফলে স্থানীয় কৃষকদের জীবনমান উন্নত হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা দৃঢ়তর হবে।