পাওনা টাকা আদায়: আইনি ও বিকল্প উপায়
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা অনেক সময়ই একে অপরের কাছ থেকে টাকা ধার করি বা ধার দিই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধার দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। এই পাওনা টাকা আদায়ের ব্যাপারে অনেকেরই বিভ্রান্তি থাকে। আজকে আমরা পাওনা টাকা আদায়ের বিভিন্ন আইনি ও বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
টাকা ধার দেওয়ার আগে করণীয়:
- লিখিত চুক্তি: যতই আপনজন হোক না কেন, টাকা ধার দেওয়ার আগে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করে নিন। ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করুন। চুক্তিতে টাকার পরিমাণ, ধার দেওয়ার কারণ, ফেরত দেওয়ার তারিখ, পরিশোধের পদ্ধতি (এককালীন কিংবা কিস্তিতে) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। চুক্তি ভঙ্গের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের বিষয়টিও উল্লেখ করা উচিত। চুক্তিটি নোটারি বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করুন এবং কয়েকজন সাক্ষীর স্বাক্ষর নিন।
- চেক: যদি সম্ভব হয়, টাকা ধার নেওয়ার সময় তারিখ ছাড়া একটা চেক নিন। চেক ডিসঅনারের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
- প্রমাণ সংরক্ষণ: টাকা ধার দেওয়ার সমস্ত প্রমাণ (মেসেজ, ইমেইল, কল রেকর্ড ইত্যাদি) সংরক্ষণ করুন।
পাওনা টাকা আদায়ের উপায়:
- স্থানীয় সালিশ: প্রথমে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিশের চেষ্টা করুন। এতে মামলা-মোকদ্দমা এড়ানো যায়।
- আইনি পদক্ষেপ: সালিশ ব্যর্থ হলে, আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
* দেওয়ানী মামলা: দেওয়ানী আদালতে মানি স্যুট দায়ের করুন। কোর্ট ফি দাখিল করতে হবে।
* ফৌজদারী মামলা: যদি প্রতারণা হয়ে থাকে, তাহলে ফৌজদারী আদালতে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মামলা দায়ের করতে পারেন। থানায় এজাহার দায়েরও সম্ভব।
* চেক ডিসঅনার: যদি তারিখবিহীন চেক থাকে এবং চেকটি ডিসঅনার হয়, তাহলে চেক ডিসঅনারের মামলা করুন।
* অর্থঋণ আদালত: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি টাকা পাওনা থাকে, তাহলে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারে।
* শ্রম আদালত: কর্মচারীর বেতন পাওনা থাকলে শ্রম আদালতে আশ্রয় নিতে পারেন।
উপসংহার:
পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। লিখিত চুক্তি, প্রমাণ সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি পাওনা টাকা আদায় করতে পারেন। আইনি বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা নিতে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।