সালিশ

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩২ এএম

সালিশ: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিচার ব্যবস্থা

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে প্রাচীনকাল থেকেই সালিশ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিচার প্রথা যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক পন্থা হিসেবে কাজ করে। সালিশ শব্দটি আরবি ‘ছালাছা’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘তিন’। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'arbitration', যার অর্থ মধ্যস্থতা। এই তিন নাম্বারটা ইঙ্গিত করে তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকার প্রতি, যিনি দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে থাকেন।

সালিশের প্রক্রিয়া: সালিশের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বিরোধের সমাধান করা হয়। বিরোধী পক্ষগুলিকে একসাথে বসিয়ে সালিশকারী তাদের কথা শোনেন এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। সালিশকারী সাধারণত সমাজের সম্মানিত এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা হয়ে থাকেন, যেমন- গ্রামের প্রধান, ধর্মীয় নেতা, বা অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি। সালিশি চুক্তি অনুযায়ী, পক্ষগুলো তাদের সমস্যার সমাধানে রাজি হলে একটি সালিশনামা তৈরি করা হয় যাতে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর থাকে।

সালিশি আইন: বাংলাদেশে সালিশ সম্পর্কিত আইন ১৯৪০ সালে প্রণীত হয়। পরে ২০০১ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়, এবং এর পরিধি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিষয় পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। এই সংশোধিত আইন অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশী নাগরিক এবং একজন বিদেশী, বিদেশী সংস্থা অথবা বিদেশী সরকারের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিরোধের ক্ষেত্রেও সালিশের ব্যবস্থা রয়েছে। সালিশি ট্রাইব্যুনাল একক বা একাধিক সালিশকারী দিয়ে গঠিত হতে পারে। যদি সালিশকারীর সংখ্যা নির্ধারিত না থাকে, তাহলে তিনজন সালিশকারী নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। যদি পক্ষগুলো তৃতীয় সালিশকারী নিয়োগে একমত না হয়, তাহলে আদালত সেই সালিশকারী নিয়োগ করবেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK): আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত বেসরকারী সংস্থা যা মানবাধিকার এবং আইনগত সহায়তায় কাজ করে।

উপসংহার: সালিশ বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যবাহী একটি বিচার প্রক্রিয়া। আধুনিক আইনে এর পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। এটি দ্রুত, সহজ এবং খরচ সাশ্রয়ী সমাধান উপায় হিসেবে কাজ করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • সালিশ হচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রাচীন বিচার প্রথা
  • এটি দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়
  • সাধারণত গ্রামের প্রধান, ধর্মীয় নেতা, বা অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সালিশকারী হন
  • সালিশি আইন ১৯৪০ সালে প্রণীত হয় এবং ২০০১ সালে সংশোধিত হয়
  • আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত বেসরকারী সংস্থা যা মানবাধিকার এবং আইনগত সহায়তায় কাজ করে

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সালিশ

৩ জানুয়ারী ২০২৫

ধর্ষণের ঘটনায় সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়।