খুলনা জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল পাইকগাছা। ৪১১.১৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২২°২৮´ থেকে ২২°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৪´ থেকে ৮৯°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে তালা ও ডুমুরিয়া, দক্ষিণে কয়রা, পূর্বে বটিয়াঘাটা ও দাকোপ এবং পশ্চিমে তালা ও আশাশুনি উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাইকগাছার জনসংখ্যা ২৪৭৯৮৩; পুরুষ ১২৩৯০০ এবং মহিলা ১২৪০৮৩। ধর্মীয়ভাবে ১৬৬৫৬৪ মুসলিম, ৮০৩৩২ হিন্দু এবং ১০৮৭ খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে।
কপোতাক্ষ, শিবসা, মরিচাপ, হাড়িয়া এবং সেংগ্রাইল নদী পাইকগাছার প্রধান জলাশয়। মরা ভাদর গাঙও উল্লেখযোগ্য। প্রশাসনিকভাবে, পাইকগাছা থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ২২ এপ্রিল ১৮৭২ সালে এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে পাইকগাছা পৌরসভা গঠিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে পাইকগাছা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৩০ সালের লবণ আন্দোলনে এখানকার মানুষ অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। বোয়ালিয়ার যুদ্ধ (১৭ সেপ্টেম্বর), বাঁকার যুদ্ধ (১৯ সেপ্টেম্বর) এবং কপিলমুনির যুদ্ধ (৬-৯ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
শিক্ষার দিক থেকে পাইকগাছার গড় শিক্ষার হার ৫২.৮%। ৯টি কলেজ, ৫৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাইকগাছা কলেজ, কপিলমুনি কলেজ এবং শহীদ আয়ুব মুছা কলেজ উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে কৃষিই পাইকগাছার প্রধান পেশা। ধান, পাট, গম, ডাল, তিল ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। বস্ত্রশিল্প, পাটশিল্প, লবণশিল্প, ট্যানারি শিল্প প্রভৃতি শিল্প কার্যক্রম বিদ্যমান। পাইকগাছা বাজার, কপিলমুনির হাট, আগড়ঘাটার হাট উল্লেখযোগ্য। পাট, নারিকেল এবং মৎস্য প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।