পাঁচবিবি উপজেলা

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম
নামান্তরে:
Panchbibi Upazila
পাঁচবিবি উপজেলা

পাঁচবিবি উপজেলার ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতি

বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত পাঁচবিবি উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। প্রায় ৩১১.৭৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে দিনাজপুরের হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে জয়পুরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা এবং পশ্চিমে জয়পুরহাট সদর উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে সীমান্তবর্তী। ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা ও হরবতী নদী এই উপজেলার জীবনধারাকে প্রভাবিত করে।

নামকরণের ইতিহাস: পাঁচবিবি নামকরণের বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। কিংবদন্তী অনুযায়ী, পারস্যের বণিকরা লালবাজার এলাকার সমৃদ্ধি দেখে ‘পানসিভার’ শব্দ থেকে ‘পাঁচবিবি’ নামকরণ করেছিলেন। আবার, অন্য একটি জনশ্রুতি অনুসারে, প্রাচীন জনপদ পঞ্চগৌড়ের রাজধানী ছিল পাঁচবিবি, যা পরবর্তীতে বিকৃত হয়ে ‘পাঁচবিবি’ হয়েছে। আরেকটি মতান্ত অনুসারে, পাঞ্চাবিবি নামের এক বৃদ্ধার জমিতে রেলস্টেশন স্থাপিত হওয়ার ফলে এ নামকরণ হয়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতান্ত হলো ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে খাসবাগুড়ী এলাকায় এক মুসলিম দরবেশের পাঁচজন ধর্মপরায়ণ স্ত্রীর সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে ‘পাঁচবিবি দরগাহ’ নামে পরিচিত হওয়ার ফলে ‘পাঁচবিবি’ নামকরণ হয়।

ঐতিহাসিক ঘটনা: পাঁচবিবি উপজেলা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ১৮৬৮ সালে লালবাজার থানা থেকে পাঁচবিবিতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৩০ সালে হিলিতে বিলাতিদ্রব্য বর্জন আন্দোলন, ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলন এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে উপজেলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদে এখানে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাঁচবিবি লাল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন, ২৫৭টি গ্রাম, ২২২টি মৌজা এবং ১টি পৌরসভা রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৩৫,৫৬৮ জন। শিক্ষার হার ৫০% এর উপরে।

অর্থনীতি: উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আলু, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। কচু ও কচুর লতি রপ্তানি হয়। বাসাভাড়া, ব্যবসা, পরিবহনও অর্থনীতির অন্যতম উৎস।

পরিবহন: পাঁচবিবি হতে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় বাস ও ট্রেনে যাতায়াত করা যায়। পাঁচমাথা রোডে রেলস্টেশন ও বালিঘাটা বাজারে বাস টার্মিনাল অবস্থিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়সহ কলেজ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাঁচবিবি লাল বিহারী পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও পাঁচবিবি নছির মন্ডল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মসজিদ, মন্দির, গির্জা এবং মাযার উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

উপসংহার: পাঁচবিবি উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এই প্রতিবেদনে উপজেলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে, ভবিষ্যতে আরও তথ্য যুক্ত করা হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • পাঁচবিবি উপজেলা জয়পুরহাট জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
  • এর আয়তন প্রায় ৩১১.৭৭ বর্গ কিলোমিটার।
  • ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা ও হরবতী নদী এখানে প্রবাহিত হয়।
  • নামকরণের বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে।
  • ১৮৬৮ সালে লালবাজার থানা থেকে পাঁচবিবিতে স্থানান্তর হয়।
  • মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
  • অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।