পপকর্ন: ইতিহাস, পুষ্টি ও বিতর্ক
পপকর্ন, একটি ছোট্ট বীজ যা উত্তাপে ফেটে বড় হয়ে যায়, কিন্তু তার ইতিহাস ও প্রভাব অনেক বড়। আজকের পপকর্নের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, এর উৎপত্তি হাজার হাজার বছর পূর্বে মেক্সিকোতে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ৪৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পেরুতে পপকর্নের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, আর ৩৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নিউ মেক্সিকোতে এর প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া গেছে।
১৯ শতকে হাতে এবং চুলায় পপকর্ন ফাটানো হতো, এবং পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একে 'পার্লস' বা 'ননপ্যারিল' নামে বিক্রি করা হতো। ১৮৯০ এর দশকে চার্লস ক্রেটরসের আবিষ্কৃত পপকর্ন মেশিনের মাধ্যমে পপকর্নের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মহামন্দার সময় এর সাশ্রয়ী মূল্য জনপ্রিয়তা আরও বাড়ায়, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনির অভাবের কারণে ক্যান্ডির বিকল্প হিসেবে এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। থিয়েটারে পপকর্ন একটি জনপ্রিয় স্ন্যাক হিসেবে পরিচিতি পায়, যদিও প্রথমদিকে থিয়েটার মালিকরা এটিকে চলচ্চিত্র থেকে দর্শকদের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া বলে মনে করতেন। ১৯৩৮ সালে গ্লেন ডব্লিউ. ডিকিনসন সিনিয়র তার থিয়েটারে পপকর্ন মেশিন স্থাপন করেন, যা ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। ১৯৭০ সালে ওরভিল রেডেনবাচারের নামাঙ্কিত ব্র্যান্ডের পপকর্ন চালু হয় এবং ১৯৮১ সালে জেনারেল মিলস প্রথম মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন ব্যাগের পেটেন্ট লাভ করে, যার ফলে পপকর্নের ব্যবহার আরও বেড়ে যায়।
পপকর্ন একটি পুষ্টিকর খাবার। এর প্রধান উপাদান হল ভুট্টার বীজ, যার শক্ত আবরণের ভেতরে থাকা জল ও তেল উত্তাপের ফলে বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পের চাপ বীজের আবরণকে ফাটায়, যার ফলে বীজটি ২০ থেকে ৫০ গুণ বিস্তৃত হয়। পপকর্ন তেল বা মাখনের সাথে রান্না করা যায়। পপকর্নের উৎপাদনের গুণমান নির্ভর করে কতগুলো বীজ ফেটে এবং প্রতিটি বীজ কতটা বিস্তৃত হয় তার ওপর।
পপকর্ন বিভিন্ন ধরণের হয়, যেমন-রাইস টাইপ (লম্বা ও সরু) এবং পার্ল টাইপ (গোলাকার)। এই বীজগুলো হলুদ, সাদা, কালো, লাল, মভ, বেগুনি এবং বিভিন্ন রঙের হতে পারে। কিন্তু ফোলার পর সব পপকর্নের রং হলুদাভ বা সাদা হয়। বাণিজ্যিকভাবে সাদা এবং হলুদ রঙের পপকর্ন বেশি চাহিদা রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারতে পপকর্নের ওপর জিএসটি হার নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্বাদ এবং প্যাকেজিং এর উপর নির্ভর করে ৫%, ১২% এবং ১৮% জিএসটি ধার্য করা হয়েছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ পপকর্নের ওপর জিএসটি হার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
সারমর্মে, পপকর্ন হল একটি প্রাচীন এবং জনপ্রিয় স্ন্যাক যা এর ইতিহাস, পুষ্টিগত গুণ এবং জিএসটি বিতর্ক সমস্ত দিক থেকে আকর্ষণীয়।