মেলবোর্ন টেস্টে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে নীতীশ কুমার রেড্ডি ক্রিকেট জগতে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছেন। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চতুর্থ টেস্টে তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট সেঞ্চুরি করে দেশের জন্য গর্বের অধিকারী হয়েছেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে সুযোগ পেয়ে তিনি দলের প্রতি আস্থায় সেঞ্চুরি করে তার জায়গা আরো পাকা করেছেন। সেঞ্চুরির পর তার উদ্ভাবনী উদযাপনও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সেঞ্চুরি করে নীতীশ এক হাঁটুতে বসে ব্যাটটি মাটিতে রাখেন এবং তার উপর নিজের হেলমেটটি রাখেন। অন্য হাতটি আকাশে তুলে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করেন। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ সিরাজকে জড়িয়ে ধরেন। এই উদযাপনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, এটি দেশের পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।
নীতীশের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন তার পরিবার। সেঞ্চুরির পর তার বাবাকে গ্যালারিতে কাঁদতে দেখে নীতীশ বলেন, ‘আমি দেখছি আমার বাবা কাঁদছে, আমি এটার স্বপ্ন দেখেছিলাম।’
নীতীশের সেঞ্চুরিটি অবশ্য সহজে আসেনি। ৯০-এর ঘরে অনেকক্ষণ আটকে থাকার পর, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং জশপ্রীত বুমরাহর উইকেট হারানোর ফলে ভারতের উপর চাপ বেড়ে যায়। ৯৯ রানে একবার স্কট বোল্যান্ডের এলবিডব্লু থেকে বেঁচে যান নীতীশ। পরে মোহাম্মদ সিরাজের দুর্দান্ত ডিফেন্স তার সেঞ্চুরির আশা বাড়ায়। নীতীশ সিরাজের এই ডিফেন্সের জন্য তার প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, সিরাজের মানসিকতা তাকে মানসিকভাবে শক্তি যোগায়।
আরও আছে নীতীশ কুমার রেড্ডির হাফ সেঞ্চুরির গল্প। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করে তিনি ‘পুষ্পা’ সেলিব্রেশন করেন এবং ভারতীয় দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। ২২১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ওয়াশিংটন সুন্দরের সাথে জুটি গড়ে দলকে বাঁচান। মেলবোর্নে ৮১ বলে ৮১ রান করেন তিনি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে তিনি এই রান তোলেন। মেলবোর্নে ৭ নম্বর বা তার পরে ব্যাট করতে নেমে এত কম বয়সে (২১ বছর ২১৪ দিন) হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড তৈরি করেন নীতীশ। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেন ভিলজোয়েনের ৯৩ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দেন।
কলকাতায় প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, নীতীশের সেঞ্চুরি দেখে সুনীল গাভাস্কার ও রবি শাস্ত্রীর মতো কিংবদন্তীরা মুগ্ধ হয়েছেন। রবি শাস্ত্রীর চোখে জলও চলে এসেছিল। শাস্ত্রী নীতীশের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন চেয়েছেন এবং তাকে প্রথম ছয়ের মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। নীতীশের বাবার আবেগঘন ভাষণে তিনি তার ছেলের লড়াই এবং সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নীতীশের পরিবারের দুঃখ-কষ্টের কাহিনীও প্রকাশিত হয়েছে। নীতীশের বাবা মুত্যালা রেড্ডি বলেছেন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে তাদের।
সার্বিকভাবে, নীতীশ কুমার রেড্ডির ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তিনি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য এবং অদম্য চেষ্টার মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। তার লড়াই এবং সাফল্য অনুপ্রেরণা যোগাবে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য।