বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাঙালি জাতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। বাংলাদেশে এটি জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
ইতিহাস:
ঐতিহাসিকদের মতে, ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্কের সময়ে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবর এটিকে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের সিংহাসনারোহণের পর থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। আকবরের আমল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়।
আধুনিক উদযাপন:
১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসবের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ জাতীয় উৎসবের দিনে রূপ নেয়। বর্তমানে নববর্ষ উদযাপনের খবর বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়।
উদযাপনের ধরন:
এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল “শুভ নববর্ষ”। ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বিশেষ আকর্ষণ। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়:
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন। গ্রামাঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলে উৎসবের ধরন ও আয়োজনের কিছুটা পার্থক্য আছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদেরও নিজস্ব নববর্ষ উৎসব রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরাও পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে।