বাংলাদেশের বগুড়া জেলার একটি উপজেলা হল ধুনট উপজেলা। বগুড়া শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলাটির অবস্থান ২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৮´ থেকে ৮৯°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলা ধুনট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা।
ধুনট থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলায় ২১২ টি গ্রাম রয়েছে এবং ২০০১ সালে ধুনট পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, ধুনট উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ২,৯২,৪০৪ জন, যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৮০ জন। বর্তমানে জনসংখ্যা অনুমানিক ৪,৫০,০০০। যমুনা, বাঙ্গালী ও ইছামতী নদী এই উপজেলার প্রধান নদী।
ধুনট উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, পাট, সরিষা, পিঁয়াজ, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প ও বাঁশের কাজের মত কুটিরশিল্পও বিদ্যমান। বরফকল, চালকল, আটাকল এবং ওয়েল্ডিং কারখানা উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, ৯৩.২৫ কিমি পাকা রাস্তা, ১০ কিমি আধা-পাকা এবং ৪৭৭.৬৩ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ১৬ কিমি নৌপথও যোগাযোগের মাধ্যম।
ধুনট উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়ন রয়েছে: কালেরপাড়া, ভান্ডারবাড়ী, চৌকিবাড়ী, চিকাশী, ধুনট, এলাঙ্গী, গোপালনগর, গোসাইবাড়ী, মথুরাপুর এবং নিমগাছি। উপজেলায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যার মধ্যে ধুনট ডিগ্রী কলেজ (প্রতিষ্ঠিত ১৯৭২), ধুনট মহিলা কলেজ (১৯৯৬) উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৩০৫ টি মসজিদ, ১৫ টি মন্দির এবং ৩ টি তীর্থস্থান রয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ধুনট উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এলাঙ্গী বন্দর, কালেরপাড়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়েছিল অনেক নিরীহ মানুষ। ধুনট উপজেলার ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে এলাঙ্গী বন্দরের দর্গাভবন, নীলকুঠি, জোড়খালি মাদ্রাসা এবং বাদশাহ সেকেন্দারের বাড়ি উল্লেখযোগ্য।