বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ: এক জরুরি প্রয়োজন
বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার জনিত স্বাস্থ্য সংকট এক উদ্বেগের বিষয়। তামাক সম্পর্কিত রোগের বিপজ্জনক প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরি। প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন তামাকপণ্য ব্যবহারের কারণে মারা যায়। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত, এবং ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের কম বয়সী) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে রোগে ভুগছে।
তামাক সেবন বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ও রোগের প্রধান কারণ। বাংলাদেশে সিগারেট, বিড়ি এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আসক্ত (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭), যার মধ্যে ৪৬ শতাংশ পুরুষ এবং ২৫.২ শতাংশ নারী। এটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিরও ক্ষতিসাধন করে।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রস্তাবিত সংশোধনী:
২০০৫ সালে (২০১৩ সালে সংশোধিত) ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণয়ন করা হয়। তবে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আইনটি আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো কন্ট্রোল ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (এফসিটিসি) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে:
1. সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা।
2. বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
3. তামাক কোম্পানিগুলোর সব ধরনের সিএসআর প্রোগ্রাম নিষিদ্ধ করা।
4. ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করা।
5. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেজিংয়ে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে ৯০% করা।
6. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।
তামাক কোম্পানিদের দাবি:
তামাক কোম্পানিগুলি রাজস্ব হ্রাস, কর্মসংস্থানের ক্ষতি এবং অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধির মতো নানা দাবি তুলে সংশোধনীর বিরোধিতা করে আসছে। তবে গবেষণায় দেখা যায়, পূর্ববর্তী বছরগুলিতে আইন সংশোধন এবং কর বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাকচাষীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া অত্যাধুনিক ট্র্যাকিং এবং ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার করে অবৈধ বাণিজ্য কমাতে পারা যায়।
উপসংহার:
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন একটি নৈতিক প্রশ্ন। এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাসের জন্য অপরিহার্য। এই সংশোধনী দেশে তামাকের ব্যবহার কমাতে এবং একটি সুস্থ জাতি গঠনে সাহায্য করবে।