ডুরান্ড লাইন

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:১৮ এএম
নামান্তরে:
ডুরান্ড সীমা
ডুরান্ড লাইন

ডুরান্ড লাইন: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্তির রেখা

ডুরান্ড লাইন (পশতু: د ډیورنډ کرښه; উর্দু: ڈیورنڈ لائن; দারি: خط دیورند) হল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত একটি 2,670 কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের কূটনীতিক মর্টিমার ডুরান্ড এবং আফগানিস্তানের আমির আবদুর রহমান খানের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই রেখাটি স্থাপিত হয়। এই রেখাটি পশ্চিমে ইরানের সীমান্ত এবং পূর্বে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

ব্রিটিশ ভারতের ও রাশিয়ার মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার (গ্রেট গেম) সময় ডুরান্ড লাইন স্থাপিত হয়। ব্রিটিশরা আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করলেও তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিল। ১৮৯৩ সালের ১২ই নভেম্বর লিখিত একক পৃষ্ঠার চুক্তিতে ডুরান্ড লাইনের বাইরে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ১৯১৯ সালের অ্যাংলো-আফগান চুক্তির মাধ্যমে লাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত হিসেবে ডুরান্ড লাইন স্থাপিত হয়।

বিতর্ক ও অস্বীকৃতি:

আফগানিস্তান কখনোই ডুরান্ড লাইনকে তাদের সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ, এই রেখাটি পশতুন উপজাতীয় অঞ্চল ও বেলুচিস্তানের মধ্য দিয়ে গেছে, যা পশতুনদের পাশাপাশি বেলুচ ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে। আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ দাউদ খান এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কারজাই ডুরান্ড লাইনের বিরোধিতা করেছেন। তালেবানও এই লাইনকে স্বীকৃতি দেয় না। ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দিক থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্তগুলির একটি।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

ডুরান্ড লাইন হিন্দুকুশ পর্বতমালা, স্পিন ঘার, ও রেগিস্তান মরুভূমির মধ্য দিয়ে গেছে। এটি কুনার, কাবুল, কুর্রাম এবং গোমাল নদীকেও দুই ভাগে বিভক্ত করে। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ আফগানিস্তানের প্রদেশগুলিকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান, এবং গিলগিত-বালতিস্তান থেকে পৃথক করেছে। এই অঞ্চলে আদিবাসী পশতুনরা কমপক্ষে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে বসবাস করছে।

অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও সীমান্ত সমস্যা:

ডুরান্ড লাইন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ। তবে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, কাঠ, তামা, রত্ন, মার্বেল, গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্স পাচারের কারণে এই সীমান্তে বহু সমস্যা দেখা দেয়। সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যকলাপ ও আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনাও এই অঞ্চলকে অস্থির করে রেখেছে।

উপসংহার:

ডুরান্ড লাইন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত একটি বিষয়। এটি দুই দেশের মধ্যে জাতিগত ও ভৌগোলিকভাবে পৃথকীকরণের কারণ হয়েছে। এই রেখাটির প্রভাব আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের উপর ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ২৬৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রেখা
  • ১৮৯৩ সালে মর্টিমার ডুরান্ড ও আমির আব্দুর রহমান খানের চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত
  • আফগানিস্তান ডুরান্ড লাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি
  • পশতুন উপজাতি ও বেলুচদের বিভক্ত করেছে
  • ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্তগুলির একটি

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - ডুরান্ড লাইন