স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান (Don Bradman): ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম মহান ব্যাটসম্যান
ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদের একজন, যিনি ‘দ্য ডন’ নামে পরিচিত ছিলেন। ২৭ আগস্ট ১৯০৮ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের কুটামুন্ড্রায় জন্মগ্রহণকারী এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ৯৯.৯৪ এর অসাধারণ ব্যাটিং গড় তার অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করে।
একাকী অনুশীলন থেকে টেস্ট দলে:
কিশোর বয়সে ক্রিকেট স্ট্যাম্প এবং গল্ফ বল দিয়ে একা একা অনুশীলন করে ব্র্যাডম্যান তার অসাধারণ দক্ষতা গড়ে তুলেছিলেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ২২ বছর বয়সের পূর্বেই তিনি একাধিক রেকর্ড গড়েছিলেন, যার কিছু আজও অক্ষুণ্ন রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মহামন্দার সময় তিনি দেশের জনপ্রিয়তম ক্রীড়া তারকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বডিলাইন বিতর্ক ও অপরাজেয় দল:
ব্র্যাডম্যানের অসাধারণ রান সংগ্রহের ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইংল্যান্ড দল বডিলাইন নামক বিতর্কিত বোলিং কৌশল অবলম্বন করেছিল। একজন আক্রমণাত্মক ও বিনোদনমূলক ক্রিকেটার হিসেবে ব্র্যাডম্যান সর্বদা দর্শকদের আকর্ষণ করতেন। তিনি তোষামোদকে পছন্দ করতেন না এবং এটি তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি নাটকীয়ভাবে ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে অস্ট্রেলিয়াকে অপরাজেয় করে অধিনায়ক হিসেবে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেন।
জটিল ব্যক্তিত্ব ও পরবর্তী জীবন:
ব্র্যাডম্যান একজন জটিল ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তিনি কারও সাথে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখতেন না। অবসরের পর তিনি ক্রিকেট প্রশাসক, নির্বাচক এবং লেখক হিসেবেও অবদান রাখেন। তার মতামত সর্বদা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হত এবং তিনি জাতীয় প্রতিমা হিসেবে সর্বজন সমাদৃত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড তাকে 'সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত অস্ট্রেলীয়' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার ছবি ডাকটিকিট এবং মুদ্রায় ব্যবহার করা হয় এবং তার জীবদ্দশাতেই তার নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে তাকে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০১ সালে ৯২ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় তার মৃত্যু হয়।