জেলা জজ: বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় জেলা জজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদ। জেলা ও দায়রা জজ, সংক্ষেপে জেলা জজ, জেলার প্রধান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। তিনি জজ কোর্টের অধিকর্তা, জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রধান, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কর্ণধার এবং জেলার বিচার বিভাগের প্রধান। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে, জেলা জজের পদমর্যাদা সরকারের একজন সচিবের সমান। ৫ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করলে তিনি সিনিয়র জেলা জজ হন এবং তাঁর পদমর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান হয়।
জেলা জজের ক্ষমতা ও দায়িত্ব:
জেলা জজের আপীল এখতিয়ার রয়েছে। তিনি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের আপীল কর্তৃপক্ষ। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারা অনুযায়ী, তিনি জাস্টিস অব পিস হিসেবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সাথে যোগাযোগ করার অনুমতিপ্রাপ্ত।
জেলা জজ এবং দায়রা জজ:
'জেলা জজ' শব্দটি 'ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ' এর সরল অনুবাদ নয়। ফৌজদারি এখতিয়ার প্রয়োগ করার সময় তাকে দায়রা জজ এবং দেওয়ানী এখতিয়ার প্রয়োগের সময় জেলা জজ হিসেবে অভিহিত করা হয়। দায়রা জজ আদালত মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ সকল প্রকার দন্ড প্রদান করতে পারে। জেলা জজ আদালতের রিভিশন এখতিয়ারের মূল্যমান ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত।
নিয়োগ ও পদমর্যাদা:
জেলা ও দায়রা জজ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সংবিধানের ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শ করে জেলা ও দায়রা জজদের পদায়ন ও বদলি করে। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমে জেলা ও দায়রা জজের অবস্থান ১৬ নম্বরে।
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি:
জেলা জজ জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সভাপতি। এই কমিটিতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, র্যাব কমান্ডার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি), পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং জেল সুপার সদস্য হিসেবে থাকেন। তিনি ত্রৈমাসিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।