জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৫ এএম

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা: একটি বিস্তারিত বিবরণ

মেলান্দহ উপজেলা বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ময়মনসিংহ বিভাগের অধীনে অবস্থিত এই উপজেলাটি জেলার মধ্যভাগে অবস্থিত। এটি ১১টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জামালপুর সদর ও শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলা এবং ইসলামপুর উপজেলা, এবং পশ্চিমে মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা অবস্থিত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৫ সালে মেলান্দহ থানা গঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল এটি উপজেলায় উন্নীত হয়। মেলান্দহের নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে স্থানীয় প্রচলিত কিংবদন্তী অনুযায়ী, এ অঞ্চলে অতীতে অনেক ‘মেলা’ ও ‘দহ’ বা জলাশয় ছিল, যার সমন্বয়ে ‘মেলান্দহ’ নামের উদ্ভব হয়েছে। মেলান্দহের প্রাচীন ইতিহাসে হযরত শাহ কামাল (র.) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৫০৩ সালে তিনি ইয়েমেন থেকে এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন এবং দুরমুট ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে সেখানে তার মাজার রয়েছে।

ব্রিটিশ যুগের শুরুতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় মেলান্দহের মালঞ্চা কাচারি লুঠ হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জামালপুর মহকুমার সর্বত্র কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঐ সময় মেলান্দহের ঝাউগড়ার চেং সরকার কৃষকদের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী মেলান্দহে প্রবেশ করে এবং ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পায়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

মেলান্দহ উপজেলার আয়তন ২৫৮.৩২ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ৩,১৩,১৮২ জন। পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০:৯৭, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২১২ জন এবং শিক্ষার হার ৩৫.৭%। মেলান্দহ প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস।

অর্থনৈতিক কার্যক্রম:

মেলান্দহ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। ধান, আলু, পাট, তামাক, বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদন হয়। দেওয়ানগঞ্জ জিলবাংলা সুগার মিল এলাকার আওতায় থাকায় এখানে প্রচুর আখ উৎপন্ন হয়। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৭০.৫০%), অকৃষি শ্রমিক (৩.০২%), ব্যবসা (১০.৩৩%) ইত্যাদি। যোগাযোগ সড়ক ও রেলপথে। বর্ষাকালে নৌপথেও চলাচল হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

মেলান্দহে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন মেলান্দহ সরকারি কলেজ, হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, এবং অন্যান্য।

উল্লেখযোগ্য স্থান:

হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজার দুরমুট ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখ থেকে ৩১শে বৈশাখ পর্যন্ত মাসব্যাপী মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।

মেলান্দহ উপজেলা (জামালপুর)

মূল তথ্যাবলী:

  • মেলান্দহ উপজেলা জামালপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা।
  • ১৯২৫ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত।
  • কৃষিপ্রধান অঞ্চল; ধান, আলু, পাট, তামাক প্রধান ফসল।
  • ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ৩,১৩,১৮২।
  • মেলান্দহ সরকারি কলেজ, হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
  • হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজার একটি ঐতিহাসিক স্থান।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা

৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।