চিকুনগুনিয়া

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম
নামান্তরে:
চিকনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া: একটি বিস্তারিত আলোচনা

চিকুনগুনিয়া হল চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দুই থেকে চার দিনের মধ্যে হঠাৎ জ্বর এবং তীব্র জয়েন্টে ব্যথা শুরু হয়, যা কয়েক সপ্তাহ, মাস অথবা এমনকি বছরের জন্যও স্থায়ী হতে পারে। মৃত্যুর হার খুবই কম, তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি দেখা যায়।

এই ভাইরাসটি এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাগুলি সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। মানুষ ছাড়াও, বানর, পাখি, এবং ইঁদুরের মতো অন্যান্য প্রাণীতেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের আরএনএ বা অ্যান্টিবডি শনাক্ত করে রোগ নির্ণয় করা হয়। চিকুনগুনিয়ার লক্ষণগুলি ডেঙ্গু এবং জিকা জ্বরের সাথে অনেকটা মিল রাখে। একবার আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষই স্থায়ীভাবে প্রতিরোধী হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধের জন্য মশা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি জমতে না দেওয়া, পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার করা, এবং মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই রোগের কোন প্রতিষেধক বা নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্রাম, তরল খাবার, এবং সাধারণ জ্বরের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

চিকুনগুনিয়া প্রথম ১৯৫২ সালে তানজানিয়াতে শনাক্ত হয়। এর নামটি তানজানিয়ার মাকুন্দি জনগোষ্ঠীর কিমাকুন্দি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ "কুঁচিত হওয়া"। ২০০০-এর দশকে এটি ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে ১০ লক্ষের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে এটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল এক থেকে বারো দিন পর্যন্ত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত ৭২-৯৭% ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়। রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা, ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেট ব্যথা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, এবং চোখের লালা।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগাভাইরিডি পরিবারের আলফাভাইরাস গণের অন্তর্গত একটি RNA ভাইরাস। এটি সেমলিকি ফরেস্ট ভাইরাস কমপ্লেক্সের সদস্য। ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR, এবং সেরোলজি পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এই রোগের বিরুদ্ধে কোনো টিকা নেই। মশা নিয়ন্ত্রণ এবং সতর্কতা অবলম্বন করে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • চিকুনগুনিয়া হল চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের সংক্রমণ
  • এটি এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়
  • প্রধান লক্ষণ হল জ্বর ও জয়েন্টে ব্যথা
  • মশা নিয়ন্ত্রণই প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা
  • এখনো কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - চিকুনগুনিয়া

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণসমূহ বর্ণনা।