চাক্তাই খাল: চট্টগ্রামের জীবন-নাড়ী ও দুঃখের কাহিনী
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চাক্তাই খাল। একসময় বাণিজ্যের প্রধান পথ হলেও বর্তমানে এটি জলাবদ্ধতা ও দূষণের সমস্যায় জর্জরিত। প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল বহদ্দারহাট মোড় থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চাক্তাই খালের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ২৫-৩০ বছর আগেও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে এই খাল দিয়েই নৌযানে করে সারা দেশে পরিবহন করা হতো। এমনকি বান্দরবানের থানচি ও রুমা উপজেলা পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন করা হতো। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকার অর্থনীতি এই খালের উপর নির্ভরশীল ছিল।
বর্তমান অবস্থা:
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নের কারণে চাক্তাই খালের অবস্থা দুর্বিসহ। খালের তলা ভরাট হয়ে যাওয়ায়, পলি, ময়লা-আবর্জনা ও প্লাস্টিক জমে পানির প্রবাহ কমে গেছে। খালের গভীরতা মাত্র ৩-৫ ফুট, যা ছোট নৌযান চলাচলের জন্যও পর্যাপ্ত নয়। অবৈধ দখল ও দূষণ খালের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। বর্ষা মৌসুমে খালের পানি উপচে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাক্তাই খাল এখন ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ নামে পরিচিত।
উন্নয়ন প্রচেষ্টা:
চাক্তাই খালের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০০৩-০৪ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন খালের তলদেশ পাকা করা হয়। কিন্তু পাহাড়ি বালু, মাটি ও আবর্জনা জমে খাল আবার ভরাট হয়ে যায়। খালের মুখে স্লুইস গেইট নির্মাণের কাজ চলছে, যা জলাবদ্ধতা কিছুটা কমাতে সহায়ক হতে পারে। খাল খনন ও পরিষ্কারের কাজও নিয়মিত করা হয়, যদিও তা যথেষ্ট নয়। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত সড়ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
সমাধান:
চাক্তাই খালের বর্তমান সংকটের সমাধানের জন্য সার্বিক প্রয়াসের প্রয়োজন। অবৈধ দখল অপসারণ, আবর্জনা নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় চাক্তাই খালকে আবারও জীবন্ত করে তোলা সম্ভব। আমরা আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে এই ঐতিহাসিক খাল তার আগের জৌলুস ফিরে পাবে।