চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), বাংলাদেশের পঞ্চম সরকারি এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। ১৯৬৬ সালের ১৮ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ। এটি একটি বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন শৃঙ্খলায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি বহুদিন ধরেই উঠে আসছিল। ১৯৪০ সালে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী চট্টগ্রামে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন, এবং ১৯৪২ সালে নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে এই দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান সরকার চট্টগ্রামে একটি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে এবং জনগণের প্রচেষ্টার ফলে ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনায় ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, ড. আজিজুর রহমান মল্লিক প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্পাস দখল করলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একজন শিক্ষক, ১১ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন কর্মকর্তা শহীদ হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেন বীরপ্রতীক খেতাব লাভ করেন।

বর্তমান অবস্থা:

আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৯টি অনুষদ, ৫৪টি বিভাগ, ৭টি ইনস্টিটিউট এবং ৬টি গবেষণা কেন্দ্র নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় ২৭,৫৫০ শিক্ষার্থী এবং ৯০৭ জন শিক্ষক এখানে রয়েছেন। বিশাল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শাটল ট্রেন, জাদুঘর, প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর, মেডিকেল সেন্টার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার, সহ বিভিন্ন অবকাঠামো এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত মানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পরিচিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
  • দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় (আয়তনের দিক থেকে)
  • ৯টি অনুষদ, ৫৪টি বিভাগ
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য