চট্টগ্রামের মিরসরাই: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
চট্টগ্রাম জেলার একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা মিরসরাই। ৪৮২.৮৮ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে সীতাকুন্ড উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফটিকছড়ি এবং পশ্চিমে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা এর সীমান্তবর্তী। ফেনী নদী মিরসরাইয়ের প্রধান জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরাগল খাঁ, ছুটি খাঁ, নিজাম শাহ প্রমুখ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের সাথে মিরসরাইয়ের ইতিহাস জড়িত। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে এটি বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৫৮০ থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত আরাকানীদের শাসনে ছিল। শায়েস্তা খাঁর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁর নামানুসারে বুজুর্গ উমেদনগর স্থাপিত হয়। ইংরেজ শাসনামলে দুর্গাপুর ও করেরহাট এলাকা বিপ্লবীদের তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। মুক্তিযুদ্ধে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থান যেমন ফেনাফুনি ব্রিজ, শুভপুর সেতু, হিঙ্গুলী সেতু, অছি মিয়ার সেতু ও মস্তাননগর মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
মিরসরাইয়ের জনসংখ্যা প্রায় ৩৯৮,৭১৬ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। কৃষি, ব্যবসা, চাকুরি ইত্যাদি মিরসরাইয়ের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। ধান, ডাল, আলু, বেগুন, শাকসবজি, বাঁশ প্রধান কৃষি ফসল। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা প্রধান ফল। কার্পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাইপ মিল, চালকল সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা এখানে রয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার হার ৫৫.১%। মিরসরাইয়ে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছুটি খাঁ মসজিদ, নয়দুয়ারী মসজিদ, জগন্নাথ মন্দির সহ প্রাচীন নিদর্শনাদি এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে। মিরসরাইয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রেসক্লাব, লাইব্রেরি, নাট্যদল, ক্লাব ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার:
মিরসরাই ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রাম জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলা এই উপজেলার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা যায়।