ঘোড়াঘাট

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

ঘোড়াঘাট: ইতিহাস, ভূগোল ও বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা হল ঘোড়াঘাট উপজেলা। রংপুর বিভাগের অন্তর্গত এই উপজেলাটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। ১৪৮.৬৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর), দক্ষিণে পাঁচবিবি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে পলাশবাড়ী ও পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর), এবং পশ্চিমে হাকিমপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।

ইতিহাস:

ঘোড়াঘাটের নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় কাহিনী। বলা হয়, প্রাচীনকালে এখানে কোনো রাজার বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর অশ্বশালা ছিল। এই অশ্বগুলিকে করতোয়া নদীতে স্নান ও পানি পান করানো হত, যার ফলে স্থানটির নাম কালক্রমে ঘোড়াঘাট হয়েছে। ঘোড়াঘাটের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা মহাভারতীয় যুগ থেকে শুরু করে মুগল আমল পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্যযুগে ঘোড়াঘাট ছিলো একটি বৃহৎ এবং জনবহুল শহর, কথিত আছে ৫০ বাজার ও ৫৩ গলি ছিল। ১৭৬৫ সালের পূর্বে এটি সরকার পরিচালনার কেন্দ্র ও জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাট দুর্গের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়। থানা হিসেবে ঘোড়াঘাটের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৯৫ সালে এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

ঘোড়াঘাটের ভৌগোলিক অবস্থান ২৫°১৩´ থেকে ২৫°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮´ থেকে ৮৯°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ১,১৭,৭৪০। মুসলিম ১,০১,০১৪, হিন্দু ৭,৩০২, খ্রিস্টান ৬,০৬২, বৌদ্ধ ১৯ এবং অন্যান্য ৩,৩৪৩। এছাড়াও, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

অর্থনীতি:

ঘোড়াঘাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৬৮.৬৪%), ব্যবসা (১২.৯৫%), চাকরি (৪.৩৫%) এবং অন্যান্য। প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, ভুট্টা, আলু, সরিষা এবং শাকসবজি। উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প হল স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প ও কাঠের কাজ।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

শিক্ষার হার ৪৬%। এখানে ৮টি কলেজ, ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯টি ব্র্যাক স্কুল, ২টি কেজি স্কুল ও ৩৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৪টি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ৩টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক।

প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক স্থাপনা:

ঘোড়াঘাটে মুগল আমলের ছোরগাছা মসজিদ, শাহ ইসমাইল গাজীর মাজার, বদরে আরেফীনের মাজার এবং সৌর মসজিদ উল্লেখযোগ্য। ঘোড়াঘাট দুর্গের ধ্বংসাবশেষও এখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা।

মুক্তিযুদ্ধ:

মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল।

উপসংহার:

ঘোড়াঘাট উপজেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য উল্লেখযোগ্য। এই উপজেলার আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে এই নিবন্ধটি আরও সমৃদ্ধ করা হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ঘোড়াঘাট উপজেলা দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত।
  • এটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত।
  • ১৪৮.৬৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১১৭৭৪০।
  • কৃষি ঘোড়াঘাটের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
  • এখানে ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাট দুর্গের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান।
  • মুক্তিযুদ্ধে ঘোড়াঘাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - ঘোড়াঘাট

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

ঘোড়াঘাটে একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে যেখানে দুইজন নিহত হয়েছে।

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

এই স্থানে একটি গুরুতর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।