গোপালপুর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল গোপালপুর। ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত এই উপজেলা টাঙ্গাইল জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত। উত্তরে ধনবাড়ী ও মধুপুর, পূর্বে মধুপুর ও ঘাটাইল, দক্ষিণে ঘাটাইল ও ভূঞাপুর, এবং পশ্চিমে যমুনা নদী ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা নিয়ে এর সীমানা নির্ধারিত। ঝিনাই ও বৈরাণ নদী দুটি এই উপজেলা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে গোপালপুর আসামের কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মধ্যযুগে, ১৪শ শতকের শেষভাগে এটি খেন রাজবংশের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কামতা রাজ্য জয় করার পর মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। ব্রিটিশ শাসনামলে ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল আলাদা জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয় (১৮৬৯ সালের ১লা ডিসেম্বর) এবং গোপালপুর টাঙ্গাইল জেলার অংশ হয়ে যায়। ১৯২০ সালে গোপালপুর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৪ সালে গোপালপুর পৌরসভা গঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গোপালপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। এই যুদ্ধে সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘বীরবিচ্ছু’ শহীদুল ইসলাম লালু অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: গোপালপুরের আয়তন ১৯৩.৩৭ বর্গ কিমি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যা ২,৫২,৩৩১। এই উপজেলায় একটি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে।
অর্থনীতি: গোপালপুর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। ধান, গম, পাট, আলু, শাকসবজি, কাঁঠাল, আম, কলা, পেঁপে প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ ও পোলট্রিশিল্প উল্লেখযোগ্য। টেক্সটাইল মিল, টুপি ফ্যাক্টরি, চাল কল, ইট ভাটা ইত্যাদি ছোটোখাটো শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
শিক্ষা: গোপালপুরে শিক্ষার উন্নয়ন লক্ষণীয়। গোপালপুর সরকারি কলেজ, হেমনগর কলেজ, হেমনগর শশীমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রাধারাণী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংস্কৃতি: গোপালপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (পাথালিয়া গ্রাম) এ উপজেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ। বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
উপসংহার: গোপালপুর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন।