কুষ্টিয়ার কুমারখালী

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৯:০৫ এএম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এই উপজেলার ইতিহাস কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাসের সাথে জড়িত, কিন্তু এটির নিজস্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়ও রয়েছে। কুমারখালী উপজেলার ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থাপত্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন: কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা ২৫৮.৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের। এটি ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৯´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উপজেলার উত্তরে পদ্মা নদী এবং পাবনা জেলা, দক্ষিণে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা, পূর্বে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা এবং পশ্চিমে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা অবস্থিত। পদ্মা ও গড়াই নদীর অববাহিকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে নবগঠিত চরাঞ্চল ও পুরাতন বিল এলাকা রয়েছে।

জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী: ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কুমারখালীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩,২৮,৪৫৭ জন, যেখানে পুরুষ ১,৬৩,৪৬১ জন এবং মহিলা ১,৬৪,৯৯৬ জন। বুনো, বাঁশফোঁড় প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এই অঞ্চলে বাস করে। ২০০১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ৪৫.৩% ছিল।

অর্থনীতি ও কৃষি: কুমারখালীর অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি কৃষি। কৃষিজমি মালিকানা ও ভূমিহীনদের সংখ্যার উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক কাঠামো নির্ভরশীল। ধান, গম, পাট, আখ, ভুট্টা প্রধান কৃষি ফসল। আম, নারিকেল, কাঁঠাল, লিচু, তাল প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এবং হ্যাচারি ও নার্সারি রয়েছে। এছাড়াও শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন ও চাকুরীর উপরও অর্থনীতি নির্ভরশীল।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: উপজেলায় ১০টি কলেজ, ৩টি বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৫৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২১টি মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি উপজেলা মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র এবং ১৪টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।

যোগাযোগ: কুমারখালীতে মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ৮৮১ কিলোমিটার (পাকা ১৪২ কিমি ও কাঁচা ৭৩৯ কিমি), রেলপথ ১৯.৫ কিলোমিটার এবং ২টি রেলস্টেশন রয়েছে। পাবনা জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য শিলাইদহ-চরসাদীপুর ও কুমারখালী-যদুবয়রা ঘাট ব্যবহৃত হয়।

ঐতিহাসিক ঘটনা: কুমারখালী একটি প্রাচীন জনপদ। ইংরেজ শাসনের পূর্বে এটি ফরিদপুর ও যশোরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এটি রাজশাহী, পাবনা, নদীয়া এবং শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫৭ সালে পাবনা জেলার অধীনে কুমারখালী মহকুমা গঠিত হয়, কিন্তু ১৮৭১ সালে নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার সাথে যুক্ত হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কুমারখালী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং ৯ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়। কুমারখালীতে বিভিন্ন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি: বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুমারখালী অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মস্থান। তবে, উপজেলার সাথে যুক্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য প্রদানের জন্য আরও তথ্যের প্রয়োজন। যখনই আরও তথ্য প্রাপ্ত হবে, আমরা আপনাদের অবহিত করব।

উল্লেখযোগ্য স্থান: কুমারখালীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী (শিলাইদহ), লালন শাহের মাজার, মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, এবং আরও অনেক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপত্য রয়েছে। এই স্থাপত্যগুলি কুমারখালীর ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পদকে ধারণ করে রেখেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল।
  • ২৫৮.৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলাটি পদ্মা ও গড়াই নদীর অববাহিকায় অবস্থিত।
  • কৃষি, শিল্প, ব্যবসা ও চাকুরীর উপর অর্থনীতি নির্ভরশীল।
  • অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, মীর মশাররফ হোসেন প্রমুখের সাথে যুক্ত।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।