কামাল নামটি বহুজনের সাথে জড়িত, তাদের জীবন, কর্ম, ও অবদান নানা রকম। এই লেখায় আমরা কয়েকজন বিশিষ্ট কামাল সম্পর্কে আলোচনা করবো।
- *বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯):** একজন বিশিষ্ট কবি, বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবী। বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণকারী সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও নিজের চেষ্টায় স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত হন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নারীশিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 'আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম', 'মাতৃমঙ্গল' প্রভৃতি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং 'মহিলা সংগ্রাম পরিষদ' এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অবদান রাখেন এবং 'একাত্তরের ডায়েরী' রচনা করেন। তার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী, ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে অমূল্য অবদান রেখেছেন। একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হন তিনি।
- *গিয়াস কামাল চৌধুরী (১৯৩৯-২০১৩):** একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংবাদ বিশ্লেষক। চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী গিয়াস কামাল চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ, এল.এল.বি এবং জার্নালিজমে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিনি 'ঢাকা টাইমস', 'মর্নিং নিউজ', 'ডন', 'বাসস' এবং 'ভয়েস অব আমেরিকা'তে কর্মরত ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তার বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
- *আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬-১৯৮৯):** একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার এবং গবেষক। পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণকারী আবু হেনা কামাল ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ছিলেন। কবি, গীতিকার ও গবেষক হিসাবে তিনি স্বতন্ত্র স্থান অর্জন করেন। তার প্রবন্ধ, গবেষণা, কবিতা এবং গান বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
- *বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (১৯৪৭-১৯৭১):** একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী মোস্তফা কামাল ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য তিনি বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইন গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন।