কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ড সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ এই সৈকতটি সম্পূর্ণ বালুকাময় এবং এর অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার সৈকতের বৈশিষ্ট্য হলো এর বালুকাময় প্রকৃতি, যেখানে কাদা নেই বললেই চলে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
নবম শতাব্দীর গোড়ার দিকে থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিকারের আগে পর্যন্ত কক্সবাজার চট্টগ্রামের এক বিশাল অংশের সাথে আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের সৌন্দর্য দেখে এখানে ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুঘলদের পরে ত্রিপুরা, আরাকান, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা কক্সবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে একজন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তার নামানুসারে কক্সবাজার নামকরণ করা হয়েছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার তারতম্যের ফলে সৈকতের প্রশস্ততা পরিবর্তন হয়ে থাকে। জোয়ারে প্রশস্ততা ২০০ মিটার এবং ভাটার সময় ৪০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ভাটার সময় তৈরি হওয়া চোরাবালি বিপদজনক হতে পারে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
কক্সবাজারের অর্থনীতি মূলত পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এখানে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, কটেজ, এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে। ঝিনুক মার্কেট এবং বার্মিজ মার্কেট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
দর্শনীয় স্থান:
কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন:
- লাবণী পয়েন্ট
- সুগন্ধা পয়েন্ট
- কলাতলী পয়েন্ট
- হিমছড়ি
- ইনানী
- টেকনাফ
- রামু বৌদ্ধ মন্দির
- মহেশখালী দ্বীপ
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
জনসংখ্যা:
কক্সবাজার জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ। জেলার বিভিন্ন উপজাতি ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস রয়েছে।
কেন বিখ্যাত?
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ড সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিখ্যাত। এর সুন্দর সৈকত, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
উল্লেখযোগ্য বিষয়:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ের সম্ভাবনা থাকে। সৈকতে সাবধানে স্নান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভাটার সময় চোরাবালি বিপদজনক হতে পারে।