বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল একটি খাত, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একসময় বিদেশি ওষুধের উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন দেশের চাহিদার ৯৮% ওষুধ নিজেই উৎপাদন করে এবং বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করছে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা হচ্ছে। প্রায় ২ লাখ মানুষ এই শিল্পে কর্মসংস্থান পেয়েছে এবং প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদিত হচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
ওষুধ শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ৫০-এর দশকের শুরুতে। ১৯৭১ সালের পর শিল্পটি বিদেশি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া দখলে ছিল। স্বাধীনতার পর শুরুর দিকে মাত্র ২০% ওষুধ দেশে তৈরি হতো। এই সঙ্কট মোকাবেলায় পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি পাট ও অন্যান্য কাঁচামালের বিনিময়ে ওষুধ সরবরাহে সহায়তা করে। ১৯৮২ সালে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারির ফলে দেশীয় ওষুধ শিল্প মুক্তি পায় এবং বাজার বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৫০টির ও বেশী ওষুধ কারখানা এবং ২৬৯টি বেসরকারি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সহ অনেক দেশীয় কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। ২০০১ সালে ১৫০টি কারখানা থেকে ২০১৪ সালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রপ্তানির পরিমাণ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল প্রায় ১২,৫০০ কোটি টাকা যা বর্তমানে ১৩,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
চ্যালেঞ্জ:
ওষুধ শিল্পে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সম্ভাবনা অপরিসীম। ওষুধের কাঁচামালের অধিকাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটি এপিআই (Active Pharmaceutical Ingredient) পার্ক গড়ে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। মান নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ ওষুধের বাজারজাতকরণ এবং যোগাযোগের অনুন্নত ব্যবস্থা ও একটি প্রধান প্রতিকূলতা। দক্ষ মানবসম্পদের উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন। জাতীয় ওষুধ নীতি (১৯৮২) এর পরিবর্তন ও উন্নয়ন প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ:
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য উচ্চমানের ওষুধ উৎপাদন, কাঁচামালের দেশীয় উৎপাদন, গবেষণা এবং বিকাশ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ও নীতিগত সমর্থন এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আরও দ্রুত গতিতে আগাতে পারে।