ইয়াসির আরাফাত: ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের প্রতীক
ইয়াসির আরাফাত (২৪ আগস্ট, ১৯২৯ - ১১ নভেম্বর, ২০০৪) ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি নেতা, যিনি প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগঠন (পিএলও) এর চেয়ারম্যান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএনএ) প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ফাতাহ দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দান করেছেন।
মিশরের কায়রোতে জন্মগ্রহণকারী আরাফাতের প্রাথমিক জীবন কায়রোতেই কেটেছে। তিনি কিং ফুয়াদ প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রজীবনেই তিনি আরব জাতীয়তাবাদী ও ইসরায়েল বিরোধী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে, ফিলিস্তিনি ছাত্রদের সাধারণ সংঘের সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি ফাতাহ নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বদলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফাতাহ বিভিন্ন আরব দেশে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে জর্ডানের সাথে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে আরাফাত বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। জর্ডান থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি লেবাননে আশ্রয় নেন।
১৯৮০ এর দশকে তিনি ইসরায়েলের সাথে সংঘাতের পথ থেকে আলোচনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৮৮ সালে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করেন এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানান। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি ও ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তির জন্য আইজাক রবিন ও শিমন পেরেজ এর সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন।
২০০২ থেকে ২০০৪ সালের শেষভাগ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে রামাল্লায় তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর প্যারিসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে; সুইস গবেষকদের দাবি, তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়ামের প্রয়োগে তার মৃত্যু হয়েছে।
আরাফাত একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ তাকে মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে সম্মান করলেও, অনেক ইসরায়েলি তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে মনে করতেন।