ইউরোপের জনমত বর্তমানে দুটি বিপরীতমুখী প্রবাহের মধ্য দিয়ে চলছে। একদিকে উদার গণতন্ত্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আস্থা, অন্যদিকে জনতুষ্টিবাদ, জাতীয়তাবাদ ও অতি ডানপন্থী দলগুলোর উত্থান। এই দুই প্রবাহের লড়াই ইউরোপের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতায় লেখক দুটি ইউরোপের চিত্র উপস্থাপন করেছেন। একটি উদার গণতান্ত্রিক ইউরোপ যা দ্বন্দ্ব-সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করে নিয়েছে, অন্যটি যুদ্ধ, অশান্তি ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এই বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কেন্দ্র-বাম বা কেন্দ্র-ডানপন্থী সরকার রয়েছে। কিন্তু অতি ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলোও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনির উত্থান, জার্মানিতে অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচেল্যান্ডের (এএফডি) উল্লেখযোগ্য সাফল্য এবং হাঙ্গেরিতে ভিক্টর অরবানের আগ্রাসী ভূমিকা এর প্রমাণ। অরবান ইইউর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও ইইউর স্বার্থ ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ প্রাচীর-পরবর্তী যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছে, যার সূচনা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের মধ্য দিয়ে। এই নতুন যুগের পরিচয় এখনো স্পষ্ট নয়, কিন্তু ১৯৪৫ সালের পরবর্তী ইউরোপের মতো, এই সময়কাল ইউরোপের ভবিষ্যৎ গঠন করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় নেতারা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু বৃহত্তর সমাজে এই সচেতনতা স্পষ্ট নয়। মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ সংকট ও বহিরাগত চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে মানুষ নতুন ইউরোপ গঠনের প্রতি আগ্রহী নয়। লেখক ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামনে ইউক্রেনের সাথে সদস্যপদ, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মতো জটিল সমস্যা রয়েছে। অরবানের মতো নেতারা এই সমস্যার সমাধানে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন।
অবশেষে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন— এই দুটি ইউরোপের মধ্যে কোনটি টিকে থাকবে? তিনি বলেছেন এর উত্তর শুধু ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে না, আমাদের ওপরও নির্ভর করবে।