ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ): এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট। বর্তমানে এর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ২৪টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি প্রধান ভাষা। ইইউ-এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থিত। একক মুদ্রা ইউরো, ইউরোপীয় সংসদ ইত্যাদি ইইউ'র উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
ইতিহাস:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপে জাতীয়তাবাদের প্রভাব ও সংকটময় পরিস্থিতি ইইউ গঠনের পেছনে প্রধান প্রেরণা ছিল। ১৯৪৮ সালের হেগ সম্মেলন ইউরোপীয় ফেডারেল আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৯৫১ সালে ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত সম্প্রদায় (ECSC) গঠনের মাধ্যমে ইউরোপীয় ফেডারেশনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে রোম চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (EEC) গঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে মার্জার চুক্তির ফলে তিনটি সম্প্রদায় একীভূত হয় 'ইউরোপীয় সম্প্রদায়' হিসেবে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক যোগদান করে। ১৯৮৫ সালে শেনজেন চুক্তির মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পাসপোর্টবিহীন চলাচলের ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৯২ সালের ম্যাসট্রিচট চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় এবং ইউরো মুদ্রা চালু হয়।
বর্তমান অবস্থা:
ইইউ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি, যার ব্যাপক প্রভাব আছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। এটি বহু দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী অনেক উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সাথে জড়িত। ইইউ শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ২০১২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ১৯৫৭: রোম চুক্তি স্বাক্ষর।
- ১৯৯২: ম্যাসট্রিচট চুক্তি স্বাক্ষর, ইইউ'র জন্ম।
- ২০০২: ইউরো মুদ্রার চালু।
- ২০১৬: যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- ইইউ শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক জোট নয়, এটি একটি রাজনৈতিক জোটও।
- ইইউ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো যুদ্ধ প্রতিরোধ করা।
- ইইউ বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ইইউ'র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত চলাচল সহজ।