আল মাহমুদ

আল মাহমুদ: বাংলা সাহিত্যের এক অমিত প্রতিভা

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভ, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক – একাধারে এই সমস্ত পরিচয় নিয়েই ছিলেন আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) বাংলা কবিতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন তাঁর অনন্য কাব্যশৈলী ও চিন্তাধারার মাধ্যমে।

  • *প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:** ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আল মাহমুদের পিতা মীর আবদুর রব এবং মাতা রওশন আরা মীর। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় দাদির কাছে বর্ণপাঠ দিয়ে। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এম. ই. স্কুল, ষষ্ঠ জর্জ হাইস্কুল, কুমিল্লার দাউদকান্দির জগতপুরের সাধনা হাইস্কুল এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি নিয়াজ মোহাম্মদ হাইস্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন।
  • *সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জীবন:** ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আগমন করে দৈনিক মিল্লাত-এ প্রুফ রিডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে সাপ্তাহিক কাফেলা-র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা হয় ছোটগল্প দিয়ে। ১৯৫৪ সাল থেকে কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে 'সমকাল', 'নতুন সাহিত্য', 'চতুষ্কোণ', 'ময়ূখ' প্রভৃতি পত্রিকায়। 'লোক লোকান্তর' (১৯৬৩) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি স্বনামধন্য কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: 'কালের কলস' (১৯৬৬), 'সোনালী কাবিন' (১৯৭৩), 'মায়াবী পর্দা দুলে উঠো' (১৯৭৬) ইত্যাদি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতে অবস্থান করে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সরকার বিরোধী দৈনিক গণকণ্ঠ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং কারাবরণ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। ১৯৯৩ সালে পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বহু গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। 'কবি ও কোলাহল' তার প্রথম উপন্যাস।
  • *কাব্যশৈলী ও চিন্তাধারা:** আল মাহমুদের কবিতায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের প্রতিফলন ঘটে। আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার, নারী ও প্রেমের বিষয়বস্তু এবং এক অসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ততার সমন্বয় তার কবিতাকে করে তুলেছে অনন্য।
  • *পুরস্কার ও সম্মাননা:** আল মাহমুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
  • *মৃত্যু:** ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থায়ী স্থান অধিকার করেছেন একজন অসাধারণ কবি ও লেখক হিসেবে। তাঁর সাহিত্যকর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও অমূল্য সম্পদ হিসেবেই রয়ে যাবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • আল মাহমুদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অমিত প্রতিভা।
  • তিনি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার এবং সাংবাদিক ছিলেন।
  • তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘লোক লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘সোনালী কাবিন’।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
  • তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার ও একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কার লাভ করেছেন।