রংপুরে আবু সাঈদের মর্মান্তিক মৃত্যু: কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক অমর স্মৃতি
২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী আবু সাঈদের মৃত্যু ঘটে। এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদের মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির চিহ্ন এবং ছররা গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যদিও মৃত্যুর কারণ নয় বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।
আবু সাঈদ ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। আন্দোলনের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এক হাতে লাঠি নিয়ে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের উপর গুলি চালানোর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
আবু সাঈদের মৃত্যু ২ মাস ৮ দিন পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম ময়নাতদন্ত করেন এবং পুলিশের ছররা গুলিতে সাঈদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদনটি ৩০শে জুলাই জমা দেওয়া হয়।
আবু সাঈদের মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে এবং আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করে। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুলগেটের নামও ‘শহীদ আবু সাঈদ গেইট’ নামকরণ করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলে।
মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাবলী:
- ১৭ই জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
- ১৮ জুলাই পুলিশ এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে, পরে জামিনে মুক্ত হয়।
- ১৩ আগস্ট রংপুর পুলিশ কমিশনার এবং রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
- ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আবু সাঈদের মৃত্যু একজন তরুণ, কর্মী এবং আন্দোলনের প্রতীকের ক্ষতি ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার আত্মত্যাগের স্মৃতি সর্বদা বাংলাদেশের ইতিহাসে জীবন্ত থাকবে।