বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস রাষ্ট্র ও জাতির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ছাত্ররা নানা আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। প্রথম দিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ‘ইয়ং বেঙ্গল’ এর মতো বৌদ্ধিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, বিশ শতকের প্রথম দিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। ১৯২৮ সালে কংগ্রেসের উদ্যোগে গঠিত ‘নিখিল বঙ্গ ছাত্র সমিতি’ ছিল ছাত্র রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর মতো নেতারা এই সমিতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
মুসলিম ছাত্রদের অংশগ্রহণ প্রাথমিকভাবে সীমিত ছিল। তবে ১৯৩০ সালে ঢাকায় ‘নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমিতি’ গঠিত হয়। মুসলিম লীগের প্রভাব এই সমিতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশন’ গঠন করেন, যার বঙ্গীয় শাখা কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলিম ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত জিন্নাহর ঘোষণার পর মুসলিম ছাত্রলীগে ভাঙন দেখা দেয়। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং ছাত্রলীগ এতে নেতৃত্ব দেয়। ১৯৫২ সালে পূর্ববাংলায় বাম রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ গঠিত হয়। ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ১১ দফা দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এটি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিতে অবদান রাখে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে এবং ৩ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ‘জয় বাংলা’ ও ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরও ছাত্র রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব এবং সহিংসতার কারণে ছাত্র রাজনীতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির সংস্কারের দাবী উঠেছে।