বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বাংলাদেশি নাবিক বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি নাবিকদের নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অনেক দেশে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে থাকা নাবিকদের তীরে নামার ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া, নাবিকদের পালিয়ে যাওয়া রোধে প্রতি জাহাজে চারজন করে বডিগার্ড রাখতে হচ্ছে, যা জাহাজ কোম্পানিগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাজারো নাবিকদের চাকরি সংকট দেখা দিয়েছে।
এই সমস্যা সম্পর্কে বাংলাদেশি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী মনে করেন, নাবিকরা কেন পালিয়ে যায় সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন এবং নাবিক নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি ভুঁইফোঁড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
একজন প্রবীণ নাবিক শরিফুল ইসলামের মতে, অনেক নাবিক মানসিক প্রেরণায় জাহাজ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, নাবিকরা আমেরিকা ও ইউরোপে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় জাহাজ থেকে পালিয়ে যায় এবং এটি সমগ্র নাবিক খাতের জন্য ক্ষতিকর।
২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর, মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার নামক জাহাজ থেকে চারজন নাবিক রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে মিসিসিপি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। নৌ-অধিদপ্তর ১৯ জন পলাতক নাবিকের তালিকা প্রকাশ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এই ঘটনায় মেঘনা গ্রুপের জাহাজগুলোকে আমেরিকার বন্দরে যেতে হলে চারজন করে বডিগার্ড রাখতে হচ্ছে, যা অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পলায়নের ফলে বিশ্বের অনেক বন্দরে বাংলাদেশি নাবিকদের শোর পারমিশন নেই এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নাবিক খাতের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। নৌ-অধিদপ্তর পালিয়ে যাওয়া নাবিকদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে এবং তাদের গ্যারান্টারদেরও দায়ী করা হবে। ২০১৭ সালে ৬,৪৮১ জন নাবিক সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি করলেও ২০২৩ সালের শেষে তা বেড়ে ৯,৮৭৩ হয়েছে। তবে সনদধারী নাবিকের সংখ্যা বর্তমানে ১৯,৩৯১ জন।