আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে কর্মরত বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ দীর্ঘদিন ধরে বিসিএস ক্যাডারদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। এই পরিষদ প্রশাসন ক্যাডারের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান এবং সকল ক্যাডারের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে।
- *পরিষদের উল্লেখযোগ্য দাবি:**
- **উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল:** পরিষদের প্রধান দাবি হলো উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫% কোটা বরাদ্দ থাকায় অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হচ্ছে।
- **পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়:** ‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি।
- **পদোন্নতির সমতা:** সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, সুপারনিউমারারি পদ সৃজন, এবং পদোন্নতিতে সমান সুযোগের দাবি।
- **সুযোগ-সুবিধার সমতা:** বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, উচ্চতর গবেষণা, শিক্ষাবৃত্তি, বাসস্থান, পরিবহন, লিয়েন, ডেপুটেশন প্রদান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সকল ক্যাডারের সমান অধিকারের দাবি।
- *ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:**
১৯৭৫ সালের Services (Reorganisation and Conditions) Act এবং ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ জারি সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এসএসপি) আদেশের মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগের চেষ্টা করা হলেও, ১৯৮৯ সালে এসএসপি বাতিল করে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। এই কোটা পদ্ধতির ফলে প্রশাসন ক্যাডার অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় অসম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে।
- *আইনি দিক:**
হাইকোর্ট ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে বৈষম্যমূলক কোটা সংরক্ষণকে বেআইনি ঘোষণা করে। পরে আপিল বিভাগ ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ এর গেজেট নোটিফিকেশনকে বৈধ ঘোষণা করলেও, পরিষদের দাবি আইন অনুযায়ী বৈষম্য দূর করে নতুন আদেশ জারি করা সম্ভব।
- *কর্মসূচী:**
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করেছে যেমন কলমবিরতি, মানববন্ধন এবং সমাবেশ।
- *উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ:**
পরিষদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
- *স্থান:**
পরিষদের কর্মসূচী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
- *উপসংহার:**
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের লড়াই বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে মেধা ও সমতার প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং সংগ্রাম একটি ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক প্রশাসন গঠনের দিকে নির্দেশ করে।