বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতি, যেখানে দলের প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী আসন বণ্টন করা হয়, তা নিয়ে সমর্থন ও বিরোধিতা উভয়ই রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল, যেমন জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি, এই পদ্ধতির পক্ষে মতামত দিয়েছে। তারা মনে করেন এ পদ্ধতি স্বৈরাচারিতা প্রতিরোধে সহায়ক এবং ভোটারদের জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি এই পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করছে।
বিএনপি-র মতে, বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে তাদের সুবিধা রয়েছে। আনুপাতিক পদ্ধতি চালু হলে তাদের জয়ের সম্ভাবনা কমে যাবে। তাদের এই আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ, বিগত নির্বাচনগুলোতে বড় দুটি দল, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, তাদের ভোটের হারের তুলনায় বেশি আসন পেয়েছে। আনুপাতিক পদ্ধতি চালু হলে এই অবস্থায় পরিবর্তন আসবে, ছোট দলগুলো বেশি আসন পাবে।
আনুপাতিক পদ্ধতির উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় ১৯৮৯ সাল থেকে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখানে পার্লামেন্টের আসন দুভাবে পূরণ করা হয়: সরাসরি ভোট এবং দলের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে। নেপালে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনস্তরে বিকেন্দ্রীকৃত নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যাতে জাতীয় পার্লামেন্টের কিছু আসন আনুপাতিক পদ্ধতিতে পূরণ হয়। নেপালের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এই পদ্ধতি বঞ্চিত ও প্রান্তিক সমাজের মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে।
বাংলাদেশে আনুপাতিক পদ্ধতি চালুর বিষয়ে নানা মতামত রয়েছে। এটি চালু করার জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা, এর প্রভাব, এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে বিশ্লেষণ ও আলোচনা জরুরী।