অভিশংসন (Impeachment) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনও জনপ্রতিনিধি বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অথবা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। বিভিন্ন দেশে এই প্রক্রিয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও, মূল উদ্দেশ্য হলো জনসেবার নীতির পরিপন্থী আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে অফিস থেকে অপসারণ করা।
ইতিহাস:
অভিশংসনের প্রথম লিখিত উদাহরণ পাওয়া যায় ইংল্যান্ডের সংসদে ১৪শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। পরবর্তীতে, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং আরও অনেক দেশ তাদের সংবিধানে অভিশংসনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রক্রিয়া:
অভিশংসন প্রক্রিয়া সাধারণত দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
1. অভিযোগ উত্থাপন: এই ধাপে, আইনসভা বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।
2. বিচার: অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য একটি বিচার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এই বিচারে প্রমাণ উপস্থাপন এবং সাক্ষীদের জেরা করা হয়। বিচারের পর, অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে অফিস থেকে অপসারণ করা হয়।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
বিভিন্ন দেশে অভিশংসনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ:
- যুক্তরাষ্ট্র: রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জনসন, বিল ক্লিনটন, এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি।
- ব্রাজিল: রাষ্ট্রপতি Dilma Rousseff অভিশংসনের মাধ্যমে পদচ্যুত হয়েছিলেন।
- দক্ষিণ কোরিয়া: রাষ্ট্রপতি পার্ক গুন-হিও অভিশংসনের মাধ্যমে পদচ্যুত হয়েছিলেন।
অভিশংসনের গুরুত্ব:
অভিশংসন গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি জনসাধারণের প্রতিনিধিদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে, অভিশংসন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা আইনগত এবং রাজনৈতিক উভয় দিকই জড়িত। এটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যা জনসেবার নীতির সুরক্ষা নিশ্চিত করে।