শাপলা: বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
শাপলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaeaceae) জলজ উদ্ভিদের এক অপূর্ব প্রজাতি এবং বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এর সৌন্দর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুল বিভিন্ন দেশের পুকুর, হাওড় ও দিঘিতে দেখা যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসাবে স্বীকৃত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
শাপলা ফুলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। প্রাচীন গ্রীসে জল দেবীদের উৎসর্গ করা হত এই ফুল। প্রাচীন মিশরে এটি শ্রদ্ধার প্রতীক ছিল এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হত। ভারতে হিন্দুদের সর্প দেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল ব্যবহৃত হয়। শ্রীলংকার বুদ্ধদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮ টি শুভ চিহ্নের মধ্যে একটি ছিল শাপলা ফুল। শ্রীলংকায় এটি Nil Mānel নামে পরিচিত এবং জাতীয় ফুলও।
প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য:
শাপলার পাতা গোলাকার, সবুজ রঙের, এবং পানির উপর ভেসে থাকে। ফুল বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন সাদা, গোলাপী, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। শাপলা ফুল সাধারণত ভোরে ফোটে এবং দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে পাপড়ি বুজে যায়। বিশ্বে প্রায় ৩৫ প্রজাতির শাপলা আছে। বাংলাদেশে সাদা শাপলা (Nymphaea nauchalli), লাল রক্তকমল এবং নীল শাপলা (N. stellata) দেখা যায়।
ব্যবহার:
শাপলা ফুল শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বিভিন্ন কাজেও ব্যবহৃত হয়। শাপলার কাণ্ড ও বীজ কিছু এলাকায় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে শাপলার বীজ ভেজে ‘ঢ্যাপের খৈ’ তৈরি করা হয়। শাপলার কন্দ (শালুক) অনেকে সবজি হিসেবে খায়। ঔষধি গুণের জন্যও শাপলা ব্যবহার করা হয়। ভারতে ‘আম্বাল’ নামের আয়ুর্বেদিক ঔষধ বানাতে এটি ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান অবস্থা:
দুর্ভাগ্যবশত, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণের কারণে শাপলার আবাসস্থল হ্রাস পাচ্ছে। এই অপূর্ব ফুলের সংরক্ষণের জন্য আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।