হামিদুজ্জামান খান

হামিদুজ্জামান খান: বাংলাদেশী ভাস্কর্য ও চিত্রকলার এক অসামান্য শিল্পী

হামিদুজ্জামান খান (জন্ম: প্রায় ১৯৪৬) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী। তিনি তার আধুনিক ও বিমূর্ত ভাস্কর্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্য এবং পাখির প্রতিচ্ছবি ধারণকারী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত। তার শিল্পকর্মে প্রকাশবাদ, মিনিমালিজম ও উপাদানের বিশুদ্ধতার এক অবিরাম অন্বেষণ লক্ষ্য করা যায়। তিনি আধা-বিমূর্ত ও বিমূর্ত উভয় ধারাতেই দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন।

১৯৫০-এর দশকে নভেরা আহমেদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাস্কর্যে আধুনিক ধারার সূচনা হলেও হামিদুজ্জামান খানের স্বকীয় ধারার আধুনিক কাজ বাংলাদেশে ভাস্কর্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আলবার্টো জিয়াকোমেত্তি এবং হেনরি মুরের শিল্পকর্মে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

ভাস্কর্যের পাশাপাশি, হামিদুজ্জামান খান জলরঙ ও অ্যাক্রিলিক চিত্রকর্মের জন্যও সুপরিচিত। ১৯৬০-এর দশকেই জয়নুল আবেদীন তাঁর জলরঙ চিত্রকর্মের প্রশংসা করে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার জলরঙ চিত্রকর্মে বিমূর্ত প্রকাশবাদের ছাপ লক্ষ্য করা যায় এবং প্রধানত প্রকৃতি ও মানবদেহকে বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

ভাস্কর্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন এবং ২০০০ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন, ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার শিল্পকর্ম বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।

হামিদুজ্জামান খানের জন্ম ১৯৪৬ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নে। তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন। তার পর ভৈরব কলেজে ভর্তি হলেও আগ্রহের অভাবে ছেড়ে দেন। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সহায়তায় ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা লাভ করেন। এর পর ১৯৭৪-৭৬ সালে ভারতের বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৮২-৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।

হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পাখি, মানবদেহ, এবং প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান প্রধান বিষয়বস্তু। তিনি ব্রোঞ্জ, ইস্পাত, পাথর, অ্যালুমিনিয়াম, সাদা গ্রানাইট, মার্বেল, এবং মিশ্র মাধ্যমেও কাজ করেছেন। তার শুরুর দিকের ভাস্কর্যে প্রকাশবাদের ধারা লক্ষ্য করা গেলেও পরবর্তীতে মিনিমালিজম প্রাধান্য পায়। তিনি ১৯৭৬ সালে আইভি জামানকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে রয়েছে। তার শিল্পকর্মের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো পাবলিক স্পেসে বৃহৎ আকারের ভাস্কর্য নির্মাণ, যা শহরাঞ্চলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • হামিদুজ্জামান খান একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী।
  • তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও পাখি-কেন্দ্রিক ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত।
  • ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
  • তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন।
  • তার শিল্পকর্ম দেশ-বিদেশে প্রদর্শিত হয়েছে।