হরিরামপুর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হরিরামপুর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা ও ইছামতী নদীর তীরবর্তী এ উপজেলাটি উত্তরে শিবালয়, ঘিওর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন ও ফরিদপুর সদর উপজেলা, পূর্বে মানিকগঞ্জ সদর, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা এবং পশ্চিমে শিবালয়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও ফরিদপুর সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
২৪৫.৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১,৩৯,৩১৮ জন (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৬৫,৮১৫ এবং মহিলার সংখ্যা প্রায় ৭৩,৫০৩। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৬৯৮ জন। শিক্ষার হার ৪৮.৪%, পুরুষ ৪৯.৭% ও মহিলা ৪৭.২%।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৮৪৫ সালে হরিরামপুর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে হরিরামপুরের সুতালড়ি ও হরিণায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়েছিল এবং ১৩ ডিসেম্বর হরিরামপুর শত্রুমুক্ত হয়। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে লোকমানিয়া দরগাহ (ঝিটকা) ও মুসা খাঁ'র দুর্গ (যাত্রাপুর) উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি:
হরিরামপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষিজমি ৪৯.১৩% ভূমিমালিকদের ও ৫০.৮৭% ভূমিহীনদের মালিকানায় রয়েছে। ধান, পাট, গম, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, চীনাবাদাম প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, পেঁপে প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। শিল্পের দিক দিয়ে আটাকল, ময়দাকল, বরফকল, করাতকল, বিড়ি কারখানা উল্লেখযোগ্য। কুটিরশিল্প হিসেবে তাঁতশিল্প ও বাঁশের কাজ জনপ্রিয়। পিঁয়াজ ও গুড় প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
উপজেলায় কলেজ ৩টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩টি, এবং মাদ্রাসা ১টি রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিচারপতি নুরুল ইসলাম কলেজ, এমএ রউফ ডিগ্রি কলেজ, ঝিটকা খাজা রহমত আলী ডিগ্রি কলেজ উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫টি, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪টি, এবং ১টি এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
১৮৯৭, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প হরিরামপুর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছিল।
আরও তথ্যের জন্য:
হরিরামপুর উপজেলা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।