সিরাজদিখান থানা: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বর্তমান
বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সিরাজদিখান উপজেলা একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই লেখায় আমরা সিরাজদিখান থানার ইতিহাস, প্রশাসনিক গঠন, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা:** সিরাজদিখান উপজেলার উত্তরে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলা, পূর্বে টংগিবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে শ্রীনগর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।
- *প্রশাসনিক ইতিহাস:** মুন্সিগঞ্জ ও শ্রীনগর থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালে মুন্সিগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হয়। তখন সিরাজদিখান এলাকা শ্রীনগর থানার অধীনে ছিল। এর পূর্বে এই স্থানের নাম ছিল ইদ্রাকপুর। ১৯১৪-১৫ সালে সিরাজদিখান থানা ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস স্থাপিত হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের আদেশে সিরাজদিখান থানাকে উন্নত থানায় রূপান্তরিত করা হয় এবং উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
- *জনসংখ্যা ও ধর্ম:** ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সিরাজদিখান উপজেলার জনসংখ্যা ২৮৮,১০৭। এদের মধ্যে পুরুষ ১৪৩,৫৫৯ এবং মহিলা ১৪৪,৫৪৮। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশই মুসলিম (২৪৯,০৩২), অন্যদের মধ্যে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছে।
- *ঐতিহাসিক ঘটনা ও মুক্তিযুদ্ধ:** ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সিরাজদিখানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইছাপুর ও মধ্যপাড়া গ্রামে কংগ্রেস কর্মীদের বোমা তৈরির কার্যক্রম চলত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সিরাজদিখানের জনগণ সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। শিয়ালদী গ্রামের আব্দুল আজিজ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে পরিচিত। তার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
- *উল্লেখযোগ্য স্থান:** সিরাজদিখানে মুগল আমলের মসজিদ, পুরানো মঠ, মন্দির, সেতু এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। কুসুমপুর মসজিদ, তাজপুর মসজিদ, পাথরঘাটা মসজিদ, বিশ্ব জামে মসজিদ (রাজানগর ইউনিয়ন), শেখরনগর কালীমন্দির, শুলপুর গির্জা, মালিঘাটা স্নানতীর্থ, তালতলায় পঞ্চশিখর মহাদেব মন্দির উল্লেখযোগ্য।
- *শিক্ষা ও সংস্কৃতি:** সিরাজদিখানে কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার হার ৫৪.৯%। বিভিন্ন ক্লাব, লাইব্রেরি, নাট্যদল, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালু আছে।