সাইদুর রহমান নামটি দুইজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করতে পারে। একজন শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজসেবক, অন্যজন সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক ও লোকতত্ত্ববিদ।
- *প্রথম সাইদুর রহমান (১৯০৯-১৯৮৭):** ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রছুল্লাবাদ গ্রামে ১৯০৯ সালের ১ মে জন্মগ্রহণকারী এই সাইদুর রহমান ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি রাজশাহী কলেজে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, যেমন- বেকার হোস্টেলের সুপার, চট্টগ্রাম বিভাগের ইন্সপেক্টর অব স্কুলস, শিক্ষা বিভাগের স্পেশাল ইন্সপেক্টর, ইত্যাদি। ১৯৫৭ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং কলেজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা করেন (১৯৭২-১৯৮১)। তেজগাঁও মহিলা কলেজের অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসেবেও তিনি কাজ করেন। নারীশিক্ষা ও নারীর উন্নয়নে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলাদেশ দর্শন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তার গ্রন্থ ‘এ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ইসলামিক কালচার অ্যান্ড ফিলোসফি’ এবং প্রবন্ধাবলী বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ‘কল্যাণ দর্শন’ নামে পরিচিত তার দর্শন শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। ১৯৮৭ সালের ২৮ আগস্ট তিনি ঢাকায় মারা যান।
- *দ্বিতীয় সাইদুর রহমান (১৯৪০-২০০৭):** কিশোরগঞ্জের বিন্নগাঁও গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী এই সাইদুর রহমান ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক এবং লোকতত্ত্ববিদ। তিনি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান নামেও পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং সাংবাদিকতা শুরু করেন। বাংলা একাডেমীতে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি অসংখ্য লোককাহিনী ও লোকশিল্প সংগ্রহ করে বাংলা একাডেমী, জাতীয় যাদুঘর ও অন্যান্য সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করেন। তিনি নিজ গ্রামে একটি লোকশিল্প যাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেন। তার লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ এবং ২০০২ সালে কারুশিল্পী পরিষদের সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ তিনি মারা যান।