রোহিঙ্গা: একটি জাতিহীন জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সংগ্রাম
পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত ও নিপীড়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। তাদের ইতিহাস দীর্ঘ, জটিল এবং বেদনাদায়ক। অষ্টম শতাব্দী থেকে আরাকানে (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। আরবদের আগমনের সাথে সাথে আরাকানে ইসলামের আগমন ঘটে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৮২ সালের বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে এবং তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তোলে।
ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গারা আরাকানের অংশ ছিলেন। তাদের বংশধররা প্রাক-উপনিবেশিক ও উপনিবেশিক যুগ থেকেই এ অঞ্চলে বসবাস করছেন। তবে, ২০ শতকের শেষের দিকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে “অবৈধ অভিবাসী” হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের “রোহিঙ্গা” নামটি ব্যবহার করার পরিবর্তে “বাঙ্গালী” বলে ডাকতে শুরু করে। এ নামকরণের পেছনে ছিল তাদের জাতিগত পরিচয় নাকচ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য। ১৯৭৮, ১৯৯১-৯২, ২০১২, ২০১৫ এবং ২০১৬-১৭ সালে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয় রোহিঙ্গারা। এই নির্যাতনে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুতি, জোরপূর্বক শ্রম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন” শুরু করে, যা রোহিঙ্গাদের উপর আরও ব্যাপক নির্যাতন বয়ে আনে।
জাতিসংঘ এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূল ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই নির্যাতনের ফলে ৯ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে এসেছে। তাদের অনেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাদের প্রতি সমর্থন ও মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ অব্যাহত থাকার প্রয়োজন।