রেকর্ড

রেকর্ড: ভূমি জরিপ ও প্রজাস্বত্বের ইতিহাস

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু হলো ভূমি রেকর্ড। এই রেকর্ড সৃষ্টির পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, আইন, ও প্রক্রিয়া। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন (আইন নং ৮) এই ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে। আইনের ১০ নং অধ্যায়ে খতিয়ান (Records of Rights) তৈরির বিধান রয়েছে। তবে, সরেজমিনে জরিপের ভিত্তি হলো ১৮৭৫ সালের ৫ নং জরিপ আইন, যা আজও প্রযোজ্য।

  • *রেকর্ড তৈরির ধাপ:**

প্রক্রিয়াটি শুরু হয় সরেজমিনে জরিপ দিয়ে। এই জরিপের ভিত্তিতে তৈরি হয় খসড়া গ্রাম (মৌজা) মানচিত্র, যাকে কিশ্তওয়ার বলা হয় (সাধারণত ১৬ ইঞ্চি = ১ মাইল স্কেলে)। এরপর শুরু হয় খানাপুরি, যেখানে প্রতিটি প্লটের মালিকানা, আয়তন, জমির শ্রেণী, এবং মালিকানায় অংশীদারিত্বের বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। এই তথ্য খসড়া খতিয়ানে দেখানো হয়। কিশ্তওয়ার ও খানাপুরির কাজে জড়িত থাকেন জরিপকারী, কানুনগো, এবং সহকারী ভূবাসন কর্মকর্তা। এদের উপরে থাকেন ভূবাসন কর্মকর্তা, যাদেরকে চার্জ অফিসার বলা হয়।

খানাপুরির পরে তৈরি হয় পরচা (নকল খতিয়ান), যা জমির মালিক ও প্রজাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এরপর আসে বুইহারাত (ব্যাখ্যা) এর ধাপ, যেখানে প্রতিটি প্লট ও খতিয়ানের তথ্য প্রজাদের সাথে ব্যাখ্যা করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়। এরপরে তসদিক কর্মকর্তা খসড়া রেকর্ডের তসদিক করেন এবং ৩০ দিনের জন্য জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকে। আপত্তির নিষ্পত্তি করেন সহকারী ভূবাসন কর্মকর্তা। ১৯৫০ সালের পূর্ববঙ্গীয় জমিদারি তালুক অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে।

চূড়ান্ত যাচাই ও প্রকাশের পর রেকর্ড মুদ্রিত হয় এবং সংরক্ষণের জন্য কালেক্টরেটে পাঠানো হয়। মৌজা মানচিত্রও মুদ্রিত হয় এবং বিভিন্ন স্কেলে (৪ ইঞ্চি = ১ মাইল, ২ ইঞ্চি = ১ মাইল, ১ ইঞ্চি = ১ মাইল, ১ ইঞ্চি = ৪ মাইল) প্রশাসনিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়।

১৯৮৮ সালে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে রেকর্ড মুদ্রণের জন্য সমীক্ষা শুরু হয়। বর্তমানে কয়েকটি পাইলট প্রকল্প চলছে।

  • *জেলাভিত্তিক জরিপ:** বিশ শতকের প্রথম দিকে জেলাভিত্তিক ভূমি জরিপ ও রেকর্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলায় ১৮৮৫-৯৮ সালে সি.জি. এইচ অ্যালেন-এর নেতৃত্বে এই কাজ সম্পন্ন হয়। ত্রিপুরার চাকলা রওশনাবাদ তালুকে ১৮৯২-৯৯ সালে জেজি কুমিং-এর নেতৃত্বে এই কাজ সম্পন্ন হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় বাকেরগঞ্জে এমডি বিটসন বেল-এর নেতৃত্বে ১৯০১ সালে কাজ শুরু হয়। ১৯৩৪-৪০ সালে তৎকালীন গোটা বাংলায় প্রথম চক্রের কাজ শেষ হয়।
  • *আইনি দিক:** বর্তমানে খতিয়ানের অনুমান মূল্য (presumptive value) রয়েছে। দেওয়ানি আদালতে অস্বীকৃত না হলেই এটি সঠিক বলে ধরা হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ভূমি রেকর্ডের ভিত্তি।
  • কিশ্তওয়ার ও খানাপুরি হলো রেকর্ড তৈরির প্রধান ধাপ।
  • খতিয়ান (ROR) হলো চূড়ান্ত ভূমি রেকর্ড।
  • ১৯৮৮ সালে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে রেকর্ড তৈরির সমীক্ষা শুরু হয়।
  • খতিয়ানের অনুমান মূল্য রয়েছে, দেওয়ানি আদালতে অস্বীকৃত না হলেই সঠিক বলে ধরা হয়।