বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন: অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের মহাকাব্য
মোহাম্মদ রুহুল আমিন (১৯৩৫ - ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অমর নায়ক, যিনি সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তার অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের গল্প আজও বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার উৎস।
১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া (বর্তমানে রুহুল আমিন নগর) গ্রামে আজহার পাটোয়ারী এবং জোলেখা খাতুনের কোলে জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমিন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান। বাঘপাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আমিশাপাড়া কৃষক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। করাচির কাছে মানোরা দ্বীপের পি.এন.এস. বাহাদুর, পি.এন.এস. কারসাজ, পি.এন.এস. বাবর, পি.এন.এস. খাইবার এবং পি.এন.এস. তুঘরিল নৌঘাঁটিতে তিনি দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, রুহুল আমিন চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে ত্রিপুরার মাটিতে আশ্রয় নেন। তিনি মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে আগরতলায় একত্রিত হয়ে তিনি কলকাতায় যান। সেখানে ভারত সরকারের উপহার 'পদ্মা' ও 'পলাশ' নামক দুটি গানবোটে ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, খুলনার মংলা বন্দরের কাছে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময়, ভারতীয় বিমানের ভুলবশত আক্রমণে 'পলাশ' গানবোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুহুল আমিন গুরুতর আহত হলেও, তিনি অসাধারণ সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, আহত অবস্থায় তিনি রূপসা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পরে রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। তার মৃতদেহ উদ্ধার করে বাগমারা গ্রামের রূপসা নদীর তীরে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাকে মরণোত্তর বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে একটি রো-রো ফেরি, চট্টগ্রামে একটি স্টেডিয়াম এবং নোয়াখালীতে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়েছে। তার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কাহিনী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।